
নীরব ঘাতক কিডনি রোগ: এ পাঁচ লক্ষণ এড়িয়ে গেলেই ঘটতে পারে বিপদ

টিবিএন ডেস্ক
জুলাই ৫ ২০২৫, ১১:৫০
.jpg)
সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে কিডনির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।ছবি: টাইমস অফ ইন্ডিয়া
- 0
কিডনির সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার মূল রহস্য হল সচেতনতা এবং দ্রুত পদক্ষেপ। আপনার শরীরের সামান্য পরিবর্তন দেখা দিলেও এসব লক্ষণগুলোতে মনোযোগ দিন। হয়তো নীরবে হলেও আপনার কিডনির সাহায্য প্রয়োজন।
স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল- এ কথাটি কম বেশি আমরা সবাই জানি। আমাদের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে কিডনির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেহের বর্জ্য অপসারণ করে তরল এবং ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখা থেকে রক্তচাপ পর্যবেক্ষণ এমনকি লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে সহায়তা করে কিডনি।
তবুও কিডনির সমস্যাকে প্রায়ই আমরা এড়িয়ে চলি। কিডনির সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণগুলোকে হয় অবহেলা করি অথবা ছোটখাটো সমস্যা হিসেবে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। যা একসময় আমাদের দেহের জন্য মারাত্মক ভুল হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু বড্ড দেরি হয়ে যায় সেসময়। কিছুই করার থাকে না আর।
তাইতো নিচের ৫টি লক্ষণের একটি দেখা দিলেই একদম অবহেলা নয়। দ্রুত পরামর্শ নিতে হবে চিকিৎসকের।
ক্রমাগত ক্লান্তি এবং দুর্বলতা
কিডনি বিকল হলে রক্তে বিষাক্ত পদার্থ জমা হয় যা আমাদের দেহের শক্তির মাত্রাকে প্রভাবিত করে। এছাড়া, কিডনি যখন লোহিত রক্তকণিকা তৈরির জন্য দরকারি হরমোন এরিথ্রোপয়েটিন পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি না করে তখন রক্তাল্পতা দেখা দিতে পারে। এর ফলে দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি, মনোযোগের অভাব এবং হালকা কাজের সময় শ্বাসকষ্ট হয়। বেশিরভাগ রোগী এটিকে স্বাভাবিক ক্লান্তি বা বার্ধক্য বলে মনে করেন। ফলে রোগ নির্ণয় করতে দেরি হয়ে যায়।
প্রস্রাবের অভ্যাসের পরিবর্তন
প্রস্রাবের ফ্রিকোয়েন্সি, রঙের পরিবর্তন সাধারণত কিডনি সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণ। তবে আমরা এই লক্ষণটিকে খুব কমই গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করি। ঘন ঘন রাতের বেলা প্রস্রাব, বুদবুদ বা ফেনাযুক্ত প্রস্রাব (যা প্রোটিনের ক্ষয় বোঝায়) হেমাটুরিয়া বা প্রস্রাবে রক্ত, অথবা খুব গাঢ় প্রস্রাব - এই সবই কিডনির সম্ভাব্য ক্ষতির লক্ষণ। এই পরিবর্তনগুলোকে উপেক্ষা করা উচিত নয়।
পা, গোড়ালি বা মুখমণ্ডল ফুলে যাওয়া
যদি কিডনি শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম এবং তরল পদার্থ অপসারণ করতে না পারে, তাহলে ফোলাভাব (এডিমা) দেখা দেয় যা সহজেই আমরা দেখতে পাই। বিশেষ করে পায়ে এবং চোখের চারপাশে এই ফোলাভাব বেশি দেখা যায়। অনেকসময় আমরা ভাবি দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা বা খারাপ খাবার খাওয়ার কারণে ফোলাভাব দেখা দিয়ে থাকতে পারে। তবে আদতে এটি কিডনির বিকল হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়। তাই এমনটি হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগ নির্ণয় এবং পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ।
ক্রমাগত চুলকানি বা ত্বকের পরিবর্তন
কিডনি দুর্বল হয়ে যাওয়ার আরেকটি লক্ষণ হল ক্রমাগত চুলকানি। রক্তে বর্জ্য পদার্থ, ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের মতো খনিজ ভারসাম্যহীনতার কারণে এটি হয়। বিশেষ করে ত্বক সংক্রান্ত কোন জটিলতা না থাকা সত্ত্বেও কারণ ছাড়াই ত্বকের শুষ্কতা এবং চুলকানি দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
ক্ষুধা হ্রাস, স্বাদ না পাওয়া বা বমি বমি ভাব
কিডনির কার্যকারিতার অবনতি হওয়ার সাথে সাথে, শরীরে ইউরেমিক টক্সিন জমা হয়, যার ফলে মুখের মধ্যে স্বাদ পরিবর্তন, নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ বমি বমি ভাব, বা ক্ষুধা হ্রাসের মতো গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল লক্ষণ দেখা দেয়। এই লক্ষণগুলোকে সাধারণত হজমের সমস্যা হিসেবে ভুল ব্যাখ্যা করা হয়, যার ফলে ভুল রোগ নির্ণয় বা সঠিক চিকিৎসা পেতে অনেক দেরি হয়ে যায়।
করণীয়
যদি কারো এই লক্ষণগুলোর মধ্যে কোনটি দেখা দেয় - বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি রোগের পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে। অথবা দীর্ঘমেয়াদী ব্যথার ওষুধ ব্যবহারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে কিডনির কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা আবশ্যক।
এছাড়া নিয়মিত রক্ত (ক্রিয়েটিনিন, ইজিএফআর) এবং প্রস্রাব (অ্যালবুমিন) স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে প্রাথমিক শনাক্তকরণের মাধ্যমে জটিলতা প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে হাইড্রেটেড থাকা কিডনির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। তাই প্রচুর তরল পান করতে হবে। পানি বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয় এবং কিডনিতে পাথর তৈরি রোধ করে। তরল ছাড়াও ফল, শাকসবজি, শস্য এবং কম সোডিয়াম ও প্রক্রিয়াজাত খাবার কিডনিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং ডায়াবেটিসের মতো রোগের ঝুঁকি কমায় যা কিডনির ক্ষতি করতে পারে। একসাথে, হাইড্রেশন, সুষম খাদ্য এবং ব্যায়াম দীর্ঘমেয়াদী কিডনি স্বাস্থ্য এবং সামগ্রিক সুস্থতার জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করে।