ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের মধ্যে একের পর এক ফোন এরদোয়ানের

টিবিএন ডেস্ক

জুন ১৫ ২০২৫, ২০:০০

ফোনালাপে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। ছবি: আনাদোলু

ফোনালাপে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। ছবি: আনাদোলু

  • 0

মধ্যপ্রাচ্যের দুই প্রতিপক্ষের মধ্যে সর্বশেষ সামরিক সংঘাত শুরুর পর ১০ জন রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান বা কার্যত সরকারপ্রধানের সঙ্গে কথা বলেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট।

ইরানে শুক্রবার শুরুর সময়ে ইসরায়েলের হামলার পর বিভিন্ন রাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফোনালাপে ব্যস্ত সময় পার করছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।

মধ্যপ্রাচ্যের দুই প্রতিপক্ষের মধ্যে সর্বশেষ সামরিক সংঘাত শুরুর পর ১০ জন রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান বা কার্যত সরকারপ্রধানের সঙ্গে কথা বলেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট।

তার দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ রবিবার এরদোয়ান ফোনে কথা বলেন অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে।

এ আলাপে ইসরায়েল-ইরান সংঘাতসহ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে।

দপ্তরের বিবৃতি অনুযায়ী, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার সংঘাত বন্ধে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্প্রতি যেসব বিবৃতি দিয়েছেন, তার প্রশংসা করেছেন এরদোয়ান।

ফোনালাপে ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধকে বিপর্যয় আখ্যা দিয়ে এটি থামাতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থার ওপর জোর দেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট।

এর আগে একই দিনে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী শিয়া আল সুদানির সঙ্গে ফোনালাপ করেন এরদোয়ান। ওই আলাপে এরদোয়ান বলেন, ইসরায়েল সৃষ্ট সহিংসতা পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে ঝুঁকিতে ফেলেছে।

তিনি এ সংঘাত থেকে দূরে থাকা ইরাকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মত দেন। এ ছাড়া সন্ত্রাসী সংগঠন এবং বর্তমানের সরকারের ভেতরকার উগ্রপন্থি উপাদানগুলোর বিরুদ্ধে ইরাককে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

ইরাকের প্রধানমন্ত্রীকে কল করার আগে কুয়েতের আমির শেখ মিশাল আল-আহমাদ আল-জাবের আল সাবাহর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এরদোয়ান।

ওই আলাপে তিনি বলেন, ইসরায়েল এ অঞ্চলের নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলেছে, যেটি নতুন আরেকটি যুদ্ধের ভার বইতে পারবে না।

একই দিনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ফোনে কথা বলেন ওমানের সুলতান হাইতাম বিন তারিক আল সাইদের সঙ্গে। সে সময় তিনি বলেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন প্রশাসন বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা সমস্যায় পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, পরমাণু আলোচনার ষষ্ঠ রাউন্ডের আগে ইরানের ওপর হামলা চালায় ইসরায়েল।

ওই সময় আলোচনাই দ্বন্দ্ব নিরসনের একমাত্র পথ বলে মত দেন এরদোয়ান।

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে শনিবার প্রথম অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপ করেন এরদোয়ান। সে আলাপে তিনি জানান, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার উত্তেজনাকর পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে তুরস্ক।

দপ্তরের বিবৃতি অনুযায়ী, এরদোয়ান ট্রাম্পকে বলেছেন, পরমাণু আলোচনাকেই দ্বন্দ্ব নিরসনের একমাত্র পথ মনে করেন এরদোয়ান।

ট্রাম্পকে কল করার আগে একটি নিরাপত্তা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।

ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথম আলাপের দিন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এরদোয়ান। তিনি তাকে বলেন, ইসরায়েল সৃষ্ট সহিংসতা মধ্যপ্রাচ্যের জন্য হুমকি হিসেবে এসেছে। এ সংঘাতের পরিবেশ থেকে নিজেদের দূরে রাখা সিরিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

তার আগে শনিবার একের পর এক ফোনালাপ করেন এরদোয়ান। ওই দিন তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফকে ফোন দিয়ে ইরানে হামলার প্রসঙ্গ তুলে বলেন, গাজায় দখলদারি ও গণহত্যার বিষয়ে নীরবতা ইসরায়েলকে এ জায়গায় নিয়ে এসেছে। হামলার মধ্যে ইসরায়েলকে গাজায় গণহত্যা আড়াল করতে দেওয়া উচিত নয়।

তার আগে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসিকে ফোন করে এরদোয়ান বলেন, আরেকটি যুদ্ধের বোঝা সামলাতে পারবে না মধ্যপ্রাচ্য। ইসরায়েলি হামলা বন্ধের পথ পরমাণু আলোচনা চালু রাখা।

সিসির সঙ্গে কলের আগে একই দিনে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে কথা বলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।

সে আলাপে ইরানের ওপর ইসরায়েলের অন্যায্য হামলার তীব্র নিন্দা জানান তিনি। এ ছাড়া প্রাণহানির ঘটনায় ইরানের জনগণের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন এ নেতা।

ইরানের নাতাঞ্জ পরমাণু ক্ষেত্রে সম্ভাব্য লিকেজের বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়ে এরদোয়ান বলেন, পরমাণু নিয়ে সংঘাত সমাধানের একমাত্র পথ কূটনৈতিক প্রক্রিয়া।

ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলার আগে একই দিনে জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহর সঙ্গে কথা বলেন।

তিনি জর্ডানের বাদশাহকে বলেন, ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলা উসকানি। ইসরায়েল সরকার এবং নেতানিয়াহুর অবৈধ ও আগ্রাসী আচরণ বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য সমস্যা সৃষ্টি করেছে।

তার আগে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে কথা বলেন এরদোয়ান। দুই প্রতিপক্ষের সংঘাত শুরুর পর এটিই ছিল বিদেশি শীর্ষ কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে এরদোয়ানের প্রথম ফোনালাপ।

সে আলাপে তিনি বলেন, নেতানিয়াহুর অধীন ইসরায়েল আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি।

এরদোয়ান আরও বলেন, উত্তেজনা প্রশমনে ইসরায়েলকে অবশ্যই থামাতে হবে।