ভ্রূণেই জিন সম্পাদনায় আটকে যাবে আলঝেইমার!

টিবিএন ডেস্ক

জুলাই ৪ ২০২৩, ১৬:৩০

চায়নার বিতর্কিত বিজ্ঞানী হি জিয়ানকুই। ছবি: সংগৃহীত

চায়নার বিতর্কিত বিজ্ঞানী হি জিয়ানকুই। ছবি: সংগৃহীত

  • 0

মানব ভ্রূণের জিন সম্পাদনার (এডিটিং) মাধ্যমে ‘প্রবীণ জনগোষ্ঠী’তে’ আলঝেইমার বিস্তার ঠেকানো সম্ভব বলে দাবি করেছেন চায়নার বিতর্কিত বিজ্ঞানী হি জিয়ানকুই। এজন্য মানুষের ভ্রূণে জেনিটিক পরিবর্তন ঘটানোর একটি প্রস্তাবও দিয়েছেন তিনি।

জিয়ানকুই ২০১৮ সালে প্রথম জিন-সম্পাদিত শিশু তৈরির ঘোষণা দিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ ও ক্ষোভের জন্ম দেন। ‘অবৈধ চিকিৎসা কার্যক্রম’ পরিচালনার অভিযোগে পরের বছর তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। গত বছর জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় বেইজিংয়ে একটি গবেষণা ল্যাব খোলার ঘোষণা জিয়ানকুই।

এরপর থেকেই তিনি টুইটার অ্যাকাউন্টে বিরল রোগের জিন থেরাপি সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রস্তাব করছেন।

জিয়ানকুই গত বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় তার নতুন গবেষণার প্রস্তাব তুলে ধরেন। এক পৃষ্ঠার একটি সংক্ষিপ্ত নথিতে তিনি বলেছেন, তার জিন-সম্পাদনা গবেষণায় প্রথমে ইঁদুরের ভ্রূণ ও পরে মানুষের নিষিক্ত ডিম্বাণু বা জাইগোটকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই সম্পাদিত ভ্রূণের ডিএনএ ‘আলঝেইমার রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয় কিনা’ তা নিয়ে পরীক্ষা করা হবে।

চায়নার ক্রমবর্ধমান বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে লক্ষ করে তিনি বলেন, ‘বয়স্ক মানুষ একটি আর্থ-সামাজিক সমস্যা। বয়সের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাদের শরীরে বাসা বাঁধে নিত্য-নতুন রোগ-বালাই। ফলে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার উপরেও চাপ বেড়ে যায়… বর্তমানে আলঝেইমার রোগের জন্য কোনো ওষুধ নেই।’

তার এই প্রস্তাব আবারও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম মানুষের ডিএনএকে প্রভাবিত করার চিকিৎসা অনৈতিক ও বিপজ্জনক বলে দাবি করছেন অনেকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন জিয়ানকুইয়ের এই প্রস্তাবটি তার কয়েক বছর আগের গবেষণা প্রস্তাবকে মনে করিয়ে দিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, বিজ্ঞানের যে শাখায় গবেষণা করার জন্য তাকে কারাভোগ করতে হয়েছিল জিয়ানকুই সেই একই শাখা নিয়ে নতুন গবেষণা প্রস্তাব দিয়েছেন। তাদের ধারণা, তিনি একটি অস্বাভাবিক ডিম্বাণুর ওপর পরীক্ষা চালিয়েছেন যা কোনো নারীর দেহে প্রতিস্থাপনের জন্য উপযুক্ত নয়।

তবে জিয়ানকুই বলছেন, গর্ভাবস্থার জন্য কোনো নারীর দেহে এই জিন-সম্পাদিত ভ্রূণ ব্যবহার করা হবে না। তিনি স্বীকার করেছেন, অতীতে মানুষের ভ্রূণ নিয়ে পরীক্ষা চালানোর আগে ‘সরকারি অনুমতি ও বৈধতার অনুমোদন’ প্রয়োজন ছিল।

চায়নার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, জিয়ানকুইয়ের নতুন প্রস্তাবটি পরবর্তী গবেষণার জন্য উপযুক্ত মনে হলেও মানুষের দেহে এ ধরনের পরীক্ষার জন্য চায়না অনুমোদন দেবে কিনা তা নিশ্চিত নয়।

মানব ভ্রূণ ও জিন সম্পাদনা নিয়ে কাজ করা বিশ্বের অন্য বিজ্ঞানীদের দাবি, জিয়ানকুইয়ের গবেষণার বর্তমান প্রস্তাবটি বৈজ্ঞানিকভাবে সঠিক নয়।

চাইনিজ কর্তৃপক্ষ বলছে, জিন সম্পাদনা নিয়ে চায়না কঠোর নিয়ম করে একাধিক পদক্ষেপ নেয়ার পরেও জিয়ানকুই অবৈধভাবে মানব ভ্রূণ নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে গেছেন। তাকে প্রজনন প্রযুক্তির পরিষেবাগুলোর সঙ্গে জড়িত কাজে যুক্ত করা থেকেও বিরত ছিল কর্তৃপক্ষ।

সিঙ্গাপুরের নানইয়াং টেকনলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক পিটার ড্রোগে বলেছেন, ‘পুরো প্রক্রিয়াটিকে সামগ্রিকভাবে উন্মাদনা’ হিসেবে উল্লেখ করা যায়।

অবশ্য ড্রোগে বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে মানব ভ্রূণ নিয়ে আরও উন্নত গবেষণার জন্য জিয়ানকুইয়ের গবেষণা ব্যবহার করা যেতে পারে।


0 মন্তব্য

Do you like cookies? 🍪 We use cookies to ensure you get the best experience on our website. Learn more...