২০২৫–২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এটি দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমন একটি বাজেট, যার আকার আগের বছরের বাজেটের চেয়ে ছোট। গত বছর (২০২৪–২৫) ঘোষিত বাজেট ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার। নতুন অর্থবছরের বাজেট আগের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম, যা দেশের বাজেট ইতিহাসে ব্যতিক্রমী ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সোমবার বিকেলে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বাজেট ঘোষণা করেন। বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘আমরা বাস্তবতার নিরিখে ব্যয় ও রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। বাজেটের পরিসংখ্যান বড় নয়, টেকসই ব্যবস্থাপনা আমাদের লক্ষ্য।’
নতুন বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে এনবিআর থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি। বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩.৬ শতাংশের মতো।
বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। বেতন–ভাতা বাবদ বরাদ্দ ৯৭ হাজার কোটি এবং সুদ পরিশোধে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা।
বাজেটে ব্যক্তিগত আয়ের করমুক্ত সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। নতুন করদাতাদের জন্য ন্যূনতম আয়কর নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার টাকা।
বিতর্কিত হলেও বাজেটে অপ্রদর্শিত আয় বা কালো টাকা বৈধ করার সুযোগও রাখা হয়েছে। কেউ যদি ২০ শতাংশ কর দিয়ে যেকোনো অপ্রদর্শিত আয় "অন্যান্য উৎস" হিসেবে দেখান, তা হলে সেটি নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা হবে না—এমন ঘোষণা দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই বাজেট সংকোচনের নয়, বরং বাস্তবতা নির্ভর ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।’
তিনি আরও বলেন, 'জনগণের ওপর নতুন কোনো বড় ধরনের চাপ দেওয়া হয়নি। বরং কর কাঠামো সহজ ও যুক্তিসংগত রাখা হয়েছে।'
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, বাজেটের আকার ছোট হওয়াটা একদিকে বাস্তববোধের পরিচয়, অন্যদিকে এটি অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের প্রতিচ্ছবিও।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ‘এই বাজেট বাস্তবভিত্তিক, তবে ঘাটতি ব্যবস্থাপনা ও বৈদেশিক ঋণের উপর নির্ভরতা বাড়ছে।’