
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ: কেউ না জিতলেও হারেনি তেহরান

শাহনূর শাহীন
জুলাই ৫ ২০২৫, ১:০৫

ইরানের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ইসরায়েলি স্থাপনা। ছবি: আল জাজিরা
- 0
সামগ্রিক বাস্তবতাকে সামনে রেখে যুদ্ধ আর বড় করেনি ইসরায়েল ও ইরান। স্পর্শকাতর অনেক তথ্য প্রকাশ্যে না আসায় এতে স্পষ্ট জয়ী যেমন কাউকে বলা যায় না, তেমনই খোলাখুলিভাবে কাউকে পরাজিত বলাও সম্ভব নয়। এ দিক থেকে যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হলেও পরাজিত হয়নি তেহরান।
প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নাটকীয় ঘোষণার মধ্য দিয়ে ২৪ জুন শেষ হয় ইরান-ইসরায়েলের স্মরণকালের ভয়াবহ যুদ্ধ। ১২ দিনের এ সংঘাতে বিরতির স্থায়িত্ব অনিশ্চিত, তবে একদিকে গাজায় ইরান-সমর্থিত হামাস, ইয়েমেনে তেহরানের সমর্থনপুষ্ট হুতিদের সঙ্গে সংঘাতের মধ্যে তেল আবিবের জন্য ইসলামি প্রজাতন্ত্রটির সঙ্গে নতুন করে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে জড়ানো কঠিন।
গত ১৩ জুন শুরুর সময়ে ইসরায়েলি বিমান হামলায় সৃষ্ট যুদ্ধে শীর্ষ কয়েকজন সামরিক কমান্ডার ও পরমাণু বিজ্ঞানী হারায় ইরান। এ ছাড়া অবকাঠামোগত নানা ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশটি।
দুই সপ্তাহের কম সময়ের এ সংঘাতে ইসরায়েলের সামরিক, বেসামরিক স্থাপনারও উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়। যদিও ঘটনাস্থলের প্রতিবেদন প্রকাশে তেল আবিবের কড়াকড়ির কারণে ক্ষতির প্রকৃত চিত্র পাওয়া দুষ্কর।
সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানায়, ১২ দিনের সংঘাতে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের আর্থিক ক্ষতি হয় ইসরায়েলের। উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয় অবকাঠামোর।
ইসরায়েলের সেন্ট্রাল ব্যাংক গভর্নর আমির ইয়ারন ব্লুমবার্গ টেলিভিশনকে জানান, যুদ্ধে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপির সম্ভাব্য ক্ষতি প্রায় এক শতাংশ। গভর্নরের এ বক্তব্যের আভাস পাওয়া যায় কূটনৈতিক আলাপচারিতাতেও।
কেউ কেউ মনে করছেন, বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে ইসরায়েলের, যা স্বীকার করেনি দেশটি।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমসহ দেশটির অন্য সংবাদমাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের উন্মুক্ত তৎপরতার ফলে তেহরানের যুদ্ধকালীন ক্ষতির চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এর ফলে অনেকে ধারণা করছেন, ইরান হয়তো অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সম্ভবত যুদ্ধে হেরেছে। যদিও বাস্তবে কে হারল আর কে জিতল, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে ভাবতে হয় আরও গভীরে গিয়ে।
সাধারণের কাছে যুদ্ধে জয়-পরাজয় নির্ধারণের মানদণ্ড হতে পারে মৃতের সংখ্যা, তবে সমর কৌশলবিদরা জয়-পরাজয়ের বিশ্লেষণে হতাহতের সংখ্যা, অবকাঠামোগত ও সামরিক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি কৌশলগত অর্জনের মতো বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নেন।
ভৌগোলিক বাস্তবতা
আয়তনে ইসরায়েলের চেয়ে ইরান ৭৯ গুণ বড়। ইরানের রাজধানী তেহরানের মহানগর এলাকা তেল আবিবের মহানগর এলাকার দেড় গুণ। ইরান প্রদেশটি গোটা ইসরায়েলের প্রায় সমান। পশ্চিমা স্বীকৃতি ও সমর্থন পাওয়া ইসরায়েলের মোট ভূমির পরিমাণ ২২ হাজার ৭৭০ বর্গকিলোমিটার। অন্যদিকে তেহরান প্রদেশের আয়তন ১৮ হাজার ৮১৪ বর্গকিলোমিটার।
ভৌগোলিক এ বিষয়গুলোর অবতারণা দেশ দুটির আনুপাতিক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আলোচনাকে সহজ করতে পারে।
জ্ঞাত ক্ষয়ক্ষতির চিত্র
যুদ্ধে ইসরায়েলি হামলায় ছয় শতাধিক ইরানির প্রাণহানি হয়। আহত হয় অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ। বদলা হিসেবে তেহরানের হামলায় ২৮ জন ইসরায়েলি নিহত ও তিন হাজারের বেশি আহত হয়। সংখ্যার হিসাবে ইরানে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় এটি সামান্য।
মূলত তেহরানের জনবহুল এলাকা ও বিভিন্ন বেসমারিক স্থাপনায় ইসরায়েল নির্বিচার হামলা করায় ইরানে হতাহতের সংখ্যা বেশি। অন্যদিকে ইরানের হামলায় সুরক্ষিত তেল আবিবের বাসিন্দারা বাঙ্কারে লুকিয়ে আঘাত ও প্রাণে বাঁচতে পারলেও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ক্ষতি হয় ইসরায়েলের।
বিশ্বব্যাপী ত্রাস সৃষ্টি করা ইসরায়েলের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ও সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আমানের সদরদপ্তরকে লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারা ইরানের বড় সফলতার অন্যতম।
ইরানের প্রতিরক্ষা সংবাদ সংস্থা দেফা প্রেস জানায়, তেহরানের হামলায় ইযরায়েলের ৩১ হাজার ভবন ও চার হাজার যানবাহন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়। এ ছাড়া ইসরায়েলের বৃহৎ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর ব্যাপক ক্ষতি করতে সক্ষম হয় ইরান।
আয়তনে ছোট হওয়ায় ইসরায়েলের সামরিক-বেসামরিক রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন স্থাপনা কাছাকাছি এলাকায়। সেই সুযোগকে কাজে লাগায় ইরান, যার ফলে সামরিক, বাণিজ্যিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষাগত উল্লেখযোগ্য কৌশলগত ক্ষতির মুখে পড়ে তেল আবিব।
এ ক্ষতি নেতানিয়াহুকে অ্যামেরিকা ও তার আরব মিত্রদের দ্বারস্থ হতে বাধ্য করে। বিশেষ করে কাতারের কাছে যুদ্ধ বন্ধে সমঝোতার অনুরোধ পাঠান নেতানিয়াহু, যা জানান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।

ইরানের জন্য ভবিষ্যৎ সতর্কবার্তা
যুদ্ধে ইসরায়েলের দৃশ্যমান বড় সাফল্য ইরানের সামরিক বাহিনীর বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে হত্যা। এটি একই সঙ্গে ইরানের জন্য ভবিষ্যৎ সতর্কতার বার্তা।
ইরানি জেনারেল ও বিজ্ঞানীদের হত্যাকাণ্ড তেহরানের ভবিষ্যৎ কৌশল ঠিক করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এ যুদ্ধের শুরুটা হয়েছিল আকাশপথে, কিন্তু সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, ইসরায়েল মূলত ইরানের ভেতর থেকে ব্যক্তি নিশানায় আক্রমণগুলো চালিয়েছিল। অর্থাৎ শুরুতেই আকাশপথে হামলা করেনি তেল আবিব। আর এটা সম্ভব হয়েছে ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের গোয়েন্দা তৎপরতার ফলে।
ইরাকের ভেতর দিয়ে ইরানে বছরের পর বছর সময়ে সময়ে সামরিক নানা সরঞ্জাম পাঠিয়েছে ইসরায়েল। তেহরানে ড্রোন ও অস্ত্র তৈরির কারখানা পর্যন্ত গড়ে তোলে দেশটি। এর ফলে ইরানের ভেতর থেকেই বিভিন্ন কাছের লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালাতে সক্ষম হয় মোসাদ।
শুরুতে ইরানের সামরিক স্থাপনার পরিবর্তে দেশটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের বাড়ি, অফিস ও ব্যক্তিগত কর্মস্থলে আঘাত করে ইসরায়েল। এর মাধ্যমে মূলত তারা ইরানের সামরিক বাহিনীর চেইন অব কমান্ড ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করে। একজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে হত্যার পর নতুন নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা নিহত হন ইসরায়েলি হামলায়।
এতে করে তেহরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা বিস্মিত হলেও বিভ্রান্ত হননি। তারা চলে যান লোকচক্ষুর অন্তরালে।
অনেক বছর ধরে সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত চৌকস কর্মকর্তাদের হারিয়ে তেহরান আরও সতর্ক হয়ে উঠে। রাতারাতি নিজেদের দুর্বলতা খুঁজে বের করার পাশাপাশি ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের গোয়েন্দা জাল তছনছ করে দেয়। এটি ছিল ইসরায়েলের অনেক বছরের প্রস্তুতির ফসল।
সামরিক বিষয় পর্যবেক্ষক সংস্থা ‘দ্য ওয়ার জোন’ জানায়, এজেন্টদের সাহায্যে স্থাপিত তেহরানের বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলের মিসাইল লঞ্চার ও ড্রোনগুলো উন্নত রিমোট প্রযুক্তির মাধ্যমে দূর থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা যেত। খুব নিখুঁতভাবে স্বল্প দূরত্বের লক্ষ্যবস্তুকে টার্গেট করতে পারত এগুলো।
মোসাদের এ কৌশল পুরোপুরি ভেঙে দেয় তেহরান, যা ভবিষ্যতে ইরানকে অভ্যন্তরীণভাবে নিরাপদ রাখতে সাহায্য করবে। এ দিক থেকে যুদ্ধ বন্ধের আগেই দৃশ্যত কৌশলগত জয় হয় ইরানের।
এ ছাড়া সংঘাতের সামগ্রিক দিক বিবেচনায় বেশ কিছু বিষয়কে সামনে আনা যায়। এগুলো যুদ্ধের ফল নিয়ে হিসাব-নিকাশ এবং উপসংহারে আসতে সহায়ক হতে পারে।
প্রথমত, ইরান শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন জেনারলকে হারিয়েছেন, যা তাদের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি, তবে যুদ্ধের মধ্যেই নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে সে ক্ষতি পুষিয়ে নতুন করে শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছে তেহরান।
অন্তত দুজন শীর্ষ কর্মকর্তার জীবিত থাকার তথ্য দিয়েছে ইরান, যাদের হত্যার ঘোষণা দিয়েছিল ইসরায়েল। বিপরীতে ইসরায়েলের অর্থনৈতিক, সামরিক, প্রযুক্তিগত ও কৌশলগত যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করা দেশটির জন্য সহজ হবে না।
দ্বিতীয়ত, যুদ্ধে অনেক কমান্ডার হারালেও ইরানের উল্লেখযোগ্য বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞ, কর্মকর্তা, অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেশ ছাড়ার খবর পাওয়া যায়নি। বিপরীতে ইরানের হামলার পর থেকে ইসরায়েলের দুর্ভেদ্যতার বয়ান দুর্বল হতে শুরু করেছে। এর ফলে দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা দেশটির বিভিন্ন খাতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যুদ্ধ চলাকালে শত শত ইসরায়েলি ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছেন। এ প্রস্থান অব্যাহত থাকলে বড় ধরনের মেধা সংকটে পড়তে পারে দেশটি। এরই মধ্যে সাইপ্রাসে ইসরায়েলিদের নতুন আবাসস্থল গড়ার খবর নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।
তৃতীয়ত, ইরানের আক্রমণে অ্যামেরিকা ও ইউরোপের দৃশ্যত নিরঙ্কুশ সমর্থন পাওয়া ইসরায়েলের সামরিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এরই মধ্যে প্রশ্নের মুখে পড়েছে। দেশটি ইহুদিদের জন্য কতটা নিরাপদ ভূমি, তা নিয়ে সন্দেহ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। যুদ্ধক্লান্ত দেশটির প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার ল্যাপিড প্রকাশ্যেই বলেছেন, এখন দেশকে পুনর্গঠন করতে হবে। এমনকি এর জন্য গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে।
ইসরায়েলের ন্যাশনাল পলিসি ফোরামের গবেষণা পরিচালক শিরা এফরন বলেন, ইরানে ইসরায়েলের যুদ্ধ এ অঞ্চলের কৌশলগত চিত্র বদলে দিয়েছে, যা গাজায় যুদ্ধ বন্ধে নেতানিয়াহুর ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।
বিপরীতে ইরান নিজেদের মাথানত না করা শক্তি হিসেবে প্রদর্শন করতে পেরেছে। অনেক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানী মারা গেলেও শেষ পর্যন্ত তারা লড়াই চালিয়ে গেছে। প্রয়োজনে আরও লড়ার প্রতিশ্রুতি ও ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। বিশেষ করে ইসরায়েলের উন্নত প্রযুক্তির দুর্ভেদ্য সামরিক প্রাচীর ভেদ করে তেহরানের আক্রমণ নেতানিয়াহু সরকারের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে। ফলে অ্যামেরিকার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে গড়িমসি ছাড়াই সম্মত হয়েছে ইসরায়েল।
চতুর্থত, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে বড় ধরনের ক্ষতি দেখেছে ইসরায়েল। দেশটির রাজনৈতিক ভাষ্যকার ওরি গোল্ডবার্গের বক্তব্যেও বিশাল ক্ষতির চিত্র উঠে এসেছে।
যুদ্ধবিরতির ঘোষণাকে ‘হাস্যকর’ আখ্যা দিয়ে তিনি আল জাজিরাকে বলেন, ইরানের হামলায় মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার পর অ্যামেরিকান চাপ ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার ফলে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল।
তার ভাষ্য, যুদ্ধ নেতানিয়াহুর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাহিদা পূরণ ছাড়া আর কোনো ফলাফল আনেনি।
ওরি গোল্ডবার্গের এ মন্তব্যে তেল আবিবের পিছু হটার বিষয়টি উঠে এসেছে।
পঞ্চমত, ইরানে হামলার পর দেশটির জনগণকে ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত শাসন ব্যবস্থা উৎখাতের আহ্বান জানিয়েছিলেন ইসরায়েল। এতে সাফল্য তো আসেইনি, উল্টো ইরানের জনগণ শিয়া, সুন্নিসহ সব বর্ণ ও ধর্মের বিভেদ ভুলে ঐক্যবব্ধ হয়েছে। যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণ ইসরায়েল-অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে করেছে প্রতিবাদ।

অ্যামেরিকা ও ইসরায়েলের সমর্থনপুষ্ট ইরানের সাবেক রাজপুত্র রেজা পাহলভি ইরানে সরকার পরিবর্তন চেয়েছিলেন, কিন্তু যুদ্ধবিরতির খবর শোনার পর তার হার্ট অ্যাটাক করে অ্যামেরিকার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রতিবেদন প্রকাশ হয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।
ষষ্ঠত, যুদ্ধে ইসরায়েলের প্রকাশ্য লক্ষ্য ছিল ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস করে দেওয়া। সে লক্ষ্যে বি-২ বোমারু বিমান ও টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইরানের তিনটি পরমাণু ক্ষেত্রে হামলা চালায় ইসরায়েলের মিত্র অ্যামেরিকা।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হামলায় ইরানের পরমাণু সক্ষমতা দীর্ঘদিনের জন্য পিছিয়ে দেওয়ার কথা বললেও তার পেন্টাগনের গোয়েন্দাদের তথ্যে ভিন্নতা পাওয়া গেছে।
ইরানের তিন পরমাণু ক্ষেত্রে ২২ জুন শুরুর সময়ে অ্যামেরিকার হামলায় তেহরানের পরমাণু কর্মসূচির মূল উপাদানগুলো ধ্বংস হয়নি বলে অ্যামেরিকার গোয়েন্দা তথ্যের প্রাথমিক মূল্যায়নে জানানো হয়েছে।
মূল্যায়নে বলা হয়েছে, অ্যামেরিকার হামলায় হয়তো কয়েক মাস পিছিয়ে গেছে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির অগ্রগতি। বিপরীতে ইরান ধাপে ধাপে ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতি করতে পেরেছে। এ ভয় ইসরায়েলিদের মধ্যে ঢুকেছে যে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একমাত্র উপায় নয়। সেটিও ভেদ করা সম্ভব।
যুদ্ধের একপর্যায়ে পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, একদিকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফুরিয়ে আসছিল ইসরায়েলের, অন্যদিকে ইরানের ক্ষয়ক্ষতিও বাড়ছিল। এমন বাস্তবতায় দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে আসে। ইরান শেষের দিকে যেসব ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের দিকে, তাতে মনে হচ্ছিল দেশটির সক্ষমতা অনেকের জানার চেয়েও বেশি।
যুদ্ধ শেষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু স্বীকার করেন, ইসরায়েলের সামরিক অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছিল। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অনেকটা ছেলেখেলা করে বলেছেন, ইসরায়েলকে রক্ষা করেছেন।
এসব ঘটনার আলোকে বলা যায়, সামগ্রিক বাস্তবতাকে সামনে রেখে যুদ্ধ আর বড় করেনি ইসরায়েল ও ইরান। স্পর্শকাতর অনেক তথ্য প্রকাশ্যে না আসায় এতে স্পষ্ট জয়ী যেমন কাউকে বলা যায় না, তেমনই খোলাখুলিভাবে কাউকে পরাজিত বলাও সম্ভব নয়। এ দিক থেকে যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হলেও পরাজিত হয়নি তেহরান।