
ভারত-পাকিস্তান পিছু হটবে নাকি সর্বাত্মক যুদ্ধে যাবে?

টিবিএন ডেস্ক
মে ৮ ২০২৫, ০:২৩

ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান। ছবি: রয়টার্স
- 0
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই পক্ষ জনগণকে যথেষ্ট তুষ্ট করতে পেরেছে কি না কিংবা যথেষ্ট পরিমাণে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতা হয়েছে কি না, তার ওপর নির্ভর করছে সামনের পরিস্থিতি।
ভারতশাসিত কাশ্মীরে প্রাণঘাতী হামলার জবাবে বুধবার শুরুর সময়ে পাকিস্তানের বিভিন্ন অবস্থানে হামলা চালায় ভারত। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ভারতের ওপরও হামলা চালায় পাকিস্তান।
হামলা শেষে দুই দেশ এখন নানা হিসাব-নিকাশ করছে। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তবর্তী প্রতিবেশী দুটি পিছু হটবে নাকি সর্বাত্মক যুদ্ধে যাবে, সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
কেমন ছিল দুই পক্ষের হামলা
পাকিস্তনের সঙ্গে কয়েক দশক ধরে চলা বৈরিতার যেকোনো মুহূর্তের তুলনায় প্রতিবেশী দেশটির বেশি গভীরে আঘাত হানে ভারত। এ হামলার ক্ষয়ক্ষতি ছিল ব্যাপক।
পাকিস্তানের ছয় থেকে ৯টি অবস্থানে ভারতের হামলায় ২০ জনের বেশি মানুষ নিহত হন।
ভারতের ওপর পাকিস্তানের মারাত্মক আঘাত হানার প্রমাণও বাড়ছে। ভারতের কর্মকর্তা, পশ্চিমা কূটনীতিক, স্থানীয় গণমাধ্যম ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, সীমান্তের ভারত অংশে দেশটির দুই থেকে তিনটি বিমান ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান। ২০১৯ সালে পাকিস্তানে সামরিক হামলার পর একই রকমের পরিস্থিতিতে পড়েছিল ভারত। এবার তারা সেটি এড়াতে চেয়েছিল।
যে সিদ্ধান্তের সামনে দেশ দুটি
পাকিস্তানের মাটিতে ভারতের হামলার পর ইসলামাবাদ একই ধরনের ব্যবস্থা নেবে কি না, সেটিই এখন প্রশ্ন। শেষ খবর হলো সব সম্ভাবনা জিইয়ে রেখেছে পাকিস্তান, তবে কূটনীতিক ও বিশ্লেষকরা আশার কিছু বাণী শুনিয়ে বলেছেন, বুধবারের ঘটনার পর সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়ানোর সুযোগ আছে দুই পক্ষেরই।
আনুষ্ঠানিক ঘোষণাগুলোতে ভারত জানিয়েছে, তারা সীমিত ও লক্ষ্যাভিমুখী হামলা চালিয়েছে। দেশটি উত্তেজনার মাত্রা বাড়াতে চায় না।
সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে পাকিস্তানের যেসব এলাকার নাম জড়িত, সেগুলোতে আক্রমণ কাশ্মীরে হামলা পরবর্তী জনরোষ চাপা দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে সাহায্য করবে।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘এসব ব্যবস্থা মাপা, উত্তেজনা বৃদ্ধিকারী নয়, আনুপাতিক এবং দায়িত্বশীল ছিল।’
অন্যদিকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও বেসামরিক কর্মকর্তারা ভারতের বিমান ভূপাতিত করার বিষয়টি সামনে এনে নিজেদের জয়ের বয়ান তৈরি করছেন।
পাকিস্তানি কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে পাঁচটি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করার দাবি করেন। তারা কূটনীতিকদের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপে জোর দিয়ে জানান, তারা সংযত আছেন।
পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের ভাষ্য, তাদের বাহিনী ভারতের বিমানগুলো থেকে যুদ্ধাস্ত্র ছোড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করছিল।
যুদ্ধ থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার ইঙ্গিত হিসেবে বুধবার রাতে আকাশসীমা উন্মুক্ত করার কথা জানায় পাকিস্তান।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ তার ভাষণে বলেন, ২৪ ঘণ্টা দায়িত্বে ছিল পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী। তারা আকাশে ওড়ামাত্র শত্রুর বিমান ভূপাতিত করার জন্য তৈরি ছিল।
তিনি আরও বলেন, রাতে পাঁচটি ভারতীয় বিমানকে ভূপাতিত করা হলেও সংখ্যাটি দশও হতে পারত, তবে পাইলটরা সতর্কতার সঙ্গে কাজ করেছে।
বিশ্লেষকদের ভাষ্য
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই পক্ষ জনগণকে যথেষ্ট তুষ্ট করতে পেরেছে কি না কিংবা যথেষ্ট পরিমাণে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতা হয়েছে কি না, তার ওপর নির্ভর করছে সামনের পরিস্থিতি।
ভারতের পার্লামেন্ট সদস্য, লেখক ও সাবেক কূটনীতিক শশী থারুর বলেন, কাশ্মীরে গত মাসের ভয়ানক হত্যাযজ্ঞের পর কিছুমাত্রায় সামরিক ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া বিকল্প ছিল না ভারত সরকারের। কারণ হামলা না হলে সন্ত্রাসীরা ভাবত যে, তারা এসে হত্যা করে চলে যেতে পারে কোনো সাজা ছাড়াই।
তিনি মনে করেন, উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে নিজেদের প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে ‘সংবেদনশীলভাবে হিসাব-নিকাশ করেছে’ ভারত।
প্রতিবেশী দেশের বিপক্ষে শক্তি দেখানোর প্রয়োজনের সময় পাকিস্তানের কাছেও উত্তেজনা পরিহারের শক্ত কারণ আছে।
মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দীর্ঘ যুদ্ধ সামলানো খুবই কঠিন পাকিস্তানের জন্য। ভারতের ভূখণ্ডে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার ক্ষেত্রেও দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়তে হবে দেশটিকে। কারণ ভারতে এমন কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নেই, যার ওপর ইটের বদলে পাটকেল মারবে পাকিস্তান।
দেশটির কাছে সম্ভাব্য একটি বিকল্প হতে পারে ভারতের সামরিক স্থাপনায় আঘাত, কিন্তু সে রকম কিছু হলে মারাত্মক পাল্টা প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
পাকিস্তানের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মুইদ ইউসফের কাছে বিষয়টি প্রতিরোধের। তার মতে, ভারতের কাছে পাকিস্তানের এটি পরিষ্কার করার দরকার যে, আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে হামলা করতে পারে না দেশটি এবং এ থেকে তাকে দূরে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, পাকিস্তানের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের মধ্যে বিতর্ক আছে যে, পাল্টা হামলায় ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করার দাবিই যথেষ্ট কি না।
এ বিশ্লেষকের মতে, উপায়গুলো উন্মুক্ত। বল এখনও ভারতের কোর্টে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাবেক চিফ অব জেনারেল স্টাফ মুহাম্মদ সাইদ বলেন, উত্তেজনা প্রশমনে দুই পক্ষেরই আন্তর্জাতিক সহায়তা দরকার। বিশ্বের ক্ষমতাধরদের উচিত দুই পক্ষকে সম্পৃক্ত হওয়ার তাগিদ অব্যাহত রাখা।