অবশেষে জিম্মিদশার অবসান ঘটলো পাকিস্তানে। ছিনতাই হওয়া জাফর এক্সপ্রেস ট্রেইনের দুইদিনের রুদ্ধশ্বাস যৌথ অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেছে, দেশটির সামরিক বাহিনী। ট্রেইনে থাকা সব সন্ত্রাসীকে হত্যার পাশাপাশি প্রায় সাড়ে তিনশ জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করে তারা। উদ্ধারের পর আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়।
মঙ্গলবার, ৯টি কোচে প্রায় সাড়ে চারশ যাত্রী নিয়ে কোয়েটা থেকে পেশোয়ারের দিকে রওনা দেয় জাফর এক্সপ্রেস। সেখান থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূরে, সিবি শহরের কাছে পাহাড়ি এলাকায় পৌঁছালে, হঠাৎ বিস্ফোরণে লাইনচ্যুত হয়ে যায় ট্রেইনটি। এরপর চালানো হয় এলোপাথাড়ি গুলি। উদ্ধারের পর ভয়াবহ সেই অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন ট্রেইনের চালক, আমজাদ। তিনি বলেন, ‘একটি বোমা বিস্ফোরণে আমাদের ট্রেইনটি লাইনচ্যুত হলেও, আমরা এটি থামাতে সক্ষম হই। কিন্তু জঙ্গিদের আক্রমণ অব্যাহত থাকে। তারা ইঞ্জিন লক্ষ্য করে গুলি চালায়। আমরা নিজেদের রক্ষা করতে ইঞ্জিনের মেঝেতে আশ্রয় নিই। আমাদের সেখানে প্রায় ২৭ ঘন্টা থাকতে বাধ্য করা হয়। সন্ত্রাসীরা অনেকক্ষণ পর জানালা ভেঙে ট্রেইনে প্রবেশ করে। তারা ভেবেছিলো আমরা সবাই মারা গেছি। সৌভাগ্যক্রমে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং এসএসজি কমান্ডোরা একটি সফল অভিযান শুরু করে এবং আমাদের মুক্ত করে।‘
অভিযান শেষে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন, বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক মন্ত্রী মীর জহুর বুলেদি। এই কাপুরুষোচিত ও নিরীহ প্রাণহানির ঘটনায় গভীরভাবে মর্মাহত তিনি। বুলেদি জানান, ‘এটি সমগ্র জাতির জন্য একটি কঠিন সময়। বিভিন্ন কারণেই আমাদের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ততটা সন্তোষজনক নয়। তবে, বেলুচিস্তান সরকার ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এটি উন্নত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।’
পাকিস্তানের আইএসপিআর-এর ডিরেক্টর জেনারেল, লুটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী জানান, অভিযানে সেনা, বিমান বাহিনী, ফ্রন্টিয়ার কর্পস ও এসএসজি’র সদস্যরা অংশ নেয়। সন্ত্রাসীরা নারী ও শিশুদের ব্যবহার করে মানবঢাল তৈরি করায় এ অভিযান ছিল মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। তবে, অভিযানের সময় কোনো যাত্রী হতাহত হননি বলে জানান তিনি। নিহতরা সবাই এই অভিযানের আগে জঙ্গিদের বর্বরতায় মারা গেছেন বলেও জানান এ কর্মকর্তা।