মধ্যপ্রাচ্যের দুই শক্তিধর রাষ্ট্র ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সৃষ্ট নতুন সংঘাতের সরাসরি প্রভাব পড়েছে বিশ্ববাজারে। তেহরানে ইসরায়েলের বিমান হামলার পরপরই আন্তর্জাতিক বাজারে হু হু করে বেড়েছে অপরিশোধিত তেল ও স্বর্ণের দাম।
শুক্রবার সকাল থেকেই বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানী তেলের দাম ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। একইসঙ্গে স্বর্ণের দামও আউন্সপ্রতি বেড়েছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এই বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত গড়িয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হলে মূল্যস্ফীতি, পণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং জ্বালানী ঘাটতির মতো সংকট তৈরি হতে পারে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যেই এর প্রভাব দৃশ্যমান। জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালির গ্যাস স্টেশনগুলোতে দেখা গেছে সাধারণ মানুষের দীর্ঘ লাইন। অনেকে সম্ভাব্য দাম বৃদ্ধির আগেই তেল মজুদের চেষ্টা করছেন।
ইতালির রাজধানী রোমের একটি গ্যাস স্টেশনে পেট্রোল নিতে আসা মাসিমো মিশিও জানান, ‘আমি পেট্রোল নিয়ে কিছুটা চিন্তিত। তবে যারা সংঘাতে প্রাণ হারাচ্ছে, তাদের কথা ভেবেই বেশি উদ্বিগ্ন। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সংঘাত থামাতে কিছুই করছে না।’
আরেক ভোক্তা, অ্যাকুইসটাপেস, পুরো পরিস্থিতির জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে বলেন, ‘পেট্রোলের দাম বাড়া সমস্যা হতে পারে, কিন্তু অসংখ্য মানুষের মৃত্যু তার চেয়ে অনেক বড় বিষয়। আমার কাছে ইসরায়েল এখন সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের মতো আচরণ করছে।’
তেল উৎপাদনে বিশ্বে সপ্তম স্থানে থাকা ইরান প্রতিদিন ৪ দশমিক ৩৮ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল উত্তোলন করে। ফলে দেশটির ওপর হামলা হলে তার প্রভাব বিশ্ববাজারে পড়বে, সেটাই স্বাভাবিক।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শুধু উৎপাদন নয়—পরিবহন এবং সরবরাহ ব্যবস্থায়ও এর প্রভাব পড়তে পারে। এর ফলে বিভিন্ন দেশের শিল্প ও পরিবহন খাতে ব্যয় বেড়ে যাবে।
অপরিশোধিত তেলের পাশাপাশি স্বর্ণের বাজারেও বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। রয়টার্স জানায়, ইসরায়েলি হামলার পরপরই শুক্রবার বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৪২৮ দশমিক ১০ ডলারে পৌঁছায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এক রাতেই ১ দশমিক ৫ শতাংশ দাম বেড়ে যায়। সংকটপূর্ণ সময়ে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদ হিসেবে স্বর্ণের দিকে ঝুঁকছেন বলে জানিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকেরা।
স্কাই নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিশ্লেষক গুরপ্রিত নারোয়ান বলেন, ‘অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়ে গেলে তার সরাসরি প্রভাব পড়ে পেট্রোলের বাজারে। এর ফলে পরিবহন খরচ বাড়ে, যা এক পর্যায়ে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতির দিকে ঠেলে দেয় অর্থনীতিকে।’
বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো যখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সুদের হার স্থিতিশীল রাখার নীতিতে যাচ্ছে, তখন এ ধরনের যুদ্ধ পরিস্থিতি নতুন করে চাপ তৈরি করছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে।