যথাযথ ধর্মীয় ভাবগম্ভীরতা, উৎসবের আমেজ ও সামাজিক সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে আজ সারা দেশে পালিত হলো মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি শহর, উপজেলা ও গ্রামাঞ্চলে শনিবার ভোর থেকেই ঈদের নামাজ আদায়ের মাধ্যমে শুরু হয় পবিত্র দিনের আনুষ্ঠানিকতা।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দান, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ বড় বড় ঈদগাহ মাঠে লাখো মানুষ একত্রিত হয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে মুসলিম উম্মাহ, দেশের কল্যাণ ও শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
ঢাকার জাতীয় ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হয় দেশের প্রধান ঈদ জামাত, যাতে রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, কূটনীতিক, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট নাগরিকরা অংশ নেন। কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে শুরু হয় নামাজ। ঈদের খুতবায় ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের শিক্ষাকে ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে ধারণ করার আহ্বান জানানো হয়।
ঈদের নামাজ শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি দেন। ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে নির্ধারিত স্থানে এবং গ্রামে ঘরোয়া পরিবেশে গরু, ছাগল, মহিষ ইত্যাদি কোরবানি দেওয়া হয়। কোরবানিকৃত পশুর মাংস আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও দরিদ্রদের মধ্যে বণ্টন করা হয়, যা ইসলামের সাম্যের বার্তা বহন করে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘ঈদুল আজহার মূল বার্তা হলো আত্মত্যাগ ও মানবিকতা। এ শিক্ষা আমাদের ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে জাতীয় জীবনেও অনুসরণ করা প্রয়োজন।’
এছাড়াও দেশের সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিভিন্ন স্থানে ঈদের নামাজ আদায় করেন এবং জনগণের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেন।
ঈদের দিন পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়, খাবার আয়োজন ও ঘুরতে যাওয়ার মধ্য দিয়ে মানুষ ঈদের আনন্দ উপভোগ করে। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল ও অনলাইন মাধ্যমে প্রচার হয় ঈদ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা, নাটক ও সিনেমা।
ঈদ উপলক্ষে সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ঈদগাহ, কোরবানির স্থান ও বিনোদন কেন্দ্রে টহল ও নজরদারি করে। স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে সিটি কর্পোরেশন ও পৌর কর্তৃপক্ষ বিশেষ ব্যবস্থা নেয়।
ত্যাগ, সংহতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের মহামূল্যবান শিক্ষা নিয়ে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন মুসলিম জাতির জন্য এক তাৎপর্যপূর্ণ উপলক্ষ। বাংলাদেশেও এই উৎসব ধর্মীয় ভাবগম্ভীরতা বজায় রেখে আনন্দঘন পরিবেশে সম্পন্ন হয়।