
নেতানিয়াহুকে কেন পাত্তা দিচ্ছেন না ট্রাম্প

টিবিএন ডেস্ক
মে ১৫ ২০২৫, ২২:৪৮

ওয়াশিংটনে গত ৭ এপ্রিল ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেন অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
- 0
মে ১৫ ২০২৫, ২২:৪৮
ওয়াশিংটনে গত ৭ এপ্রিল ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেন অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক কার্যক্রমে ‘হতবাক’ ইসরায়েল এখন কূটনৈতিকভাবে নীরব। এবার মধ্যপ্রাচ্য সফরে গিয়ে তিনি তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর দিকে নজর দিয়েছেন। তাদের সঙ্গে লাভজনক ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তুলছেন ট্রাম্প।
এ তালিকায় রয়েছে কাতার। দেশটির বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরে হামাসকে সমর্থনের অভিযোগ করে এসেছে ইসরায়েল।
ইরান ও হামাস নিয়ে ভিন্ন অবস্থান
ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের ওপর বিমান হামলা বন্ধে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণা এবং অ্যামেরিকা-ইরান আলোচনার বিষয়ে ইসরায়েল আগে থেকেই উদ্বিগ্ন। হুতিরা এখনও ইযরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে। অথচ অ্যামেরিকা যুদ্ধ বন্ধের পথে এগোচ্ছে।
তা ছাড়া অ্যামেরিকার পক্ষ থেকে গাজায় আটকে থাকা অ্যামেরিকান জিম্মি এডান আলেকজান্ডারকে মুক্ত করতে হামাসের সঙ্গে চুক্তি ইসরায়েলকে আরও চাপে ফেলেছে।
সিরিয়ার প্রতি নরম ট্রাম্প প্রশাসন
মধ্যপ্রাচ্য সফরে ট্রাম্প সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন এবং দামেস্কের নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আহ্বান জানান, কিন্তু ইসরায়েল এ সরকারকে চরমপন্থি ও জিহাদিঘেঁষা বলে বিবেচনা করে।
জেরুজালেমে সাইরেন, রিয়াদে উৎসব
ট্রাম্প যখন রিয়াদে যুদ্ধবিরতির সাফল্য নিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, তখন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আশঙ্কায় জেরুজালেম ও তেল আবিবে সাইরেন বেজে উঠছিল। এমন বাস্তবতায় ট্রাম্প বলেন, এ অঞ্চলে তার সাফল্য ইসরায়েলের জন্যই ইতিবাচক হবে।
নেতানিয়াহুর নীরবতা ও জনমতের চাপ
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এখনও পর্যন্ত শুধু জিম্মি মুক্তিতে সহায়তার জন্য ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তবে সফর নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
দেশের ভেতরে এখন জনমতের চাপ। গাজা যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হতে চললেও কূটনৈতিক অগ্রগতি নেই।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে বড় পরিবর্তন হচ্ছে। আর ইসরায়েল কেবল এক পাশে দাঁড়িয়ে দেখছে।
বাইডেন বনাম ট্রাম্প: কে বেশি বন্ধু?
নেতানিয়াহু অনেকবার বলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে জো বাইডেনের চেয়ে বেশি পছন্দ করেন। কারণ বাইডেন প্রশাসন গাজা যুদ্ধের সময় ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত করেছিল এবং বসতি স্থাপনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। কিন্তু এখন ট্রাম্প প্রশাসনেরও অবস্থান বদলে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
ট্রাম্পের নজর এখন ব্যবসায়িক লাভে
আটলান্টিক কাউন্সিলের গবেষক জোনাথন প্যানিকফ বলছেন, ট্রাম্প এখন ব্যবসা এবং বিনিয়োগকেন্দ্রিক এজেন্ডা নিয়ে এগোচ্ছেন। নিরাপত্তা বা রাজনৈতিক ইস্যু যদি তার অগ্রাধিকার না হয়, তিনি সেগুলো পাশ কাটিয়ে যাবেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজা ও ইউক্রেনের যুদ্ধ থামানোর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে নেতানিয়াহু ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে সহানুভূতি পাচ্ছেন না।
কূটনৈতিক আলোচনা বনাম সামরিক বাস্তবতা
হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তা জেইমস হিউইট বলেন, তারা ইসরায়েলের সঙ্গে মিলে এখনও গাজায় আটক ৫৮ জন জিম্মির মুক্তি এবং নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছেন।
তিনি বলেন, ইসরায়েলের ইতিহাসে ট্রাম্পের চেয়ে বড় বন্ধু আর কেউ নেই।
যদিও ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থিরা এখন চুপচাপ। একসময় তারা ট্রাম্পের গাজা সৈকতে বিলাসবহুল রিসোর্ট গড়ার কল্পনায় মুগ্ধ ছিলেন। এখন আর তেমন আশাবাদী নন তারা।
দোহায় আলোচনা চলছে, গাজায় বোমা পড়ছে
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের নেতৃত্বে দোহায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলছে। সেখানে ইসরায়েলও একটি দল পাঠিয়েছে। এর মধ্যেই গাজায় ইযরায়েলি হামলা বেড়ে গেছে। সবশেষ বৃহস্পতিবার হামলায় ফিলিস্তিনের শতাধিক বাসিন্দা নিহত হন।
নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল গাজায় আরও তীব্র সামরিক অভিযান চালাবে। দেশটি থামবে না। আত্মসমর্পণও করবে না। হামাসকে সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে ধ্বংস না করা পর্যন্ত অভিযান চলবে।