
যেসব কারণে চীনেই বেশির ভাগ আইফোন তৈরি করে অ্যাপল

টিবিএন ডেস্ক
মে ২৪ ২০২৫, ১৮:৪২

চীনে অ্যাপলের আইফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফক্সকনের কারখানায় কর্মরত দুই নারী। ছবি: রয়টার্স
- 0
অ্যাপল চাইলে অ্যামেরিকায় আইফোন তৈরি করতে পারে, তবে টেক ইনসাইটস নামের বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিশ্লেষক ওয়াইনে ল্যামের মতে, এটি কোম্পানিটির জন্য হবে ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য কাজ।
অ্যাপলের আইফোন তৈরি হবে অ্যামেরিকায়—টেক জায়ান্টটির কাছে এমনটাই প্রত্যাশা ডনাল্ড ট্রাম্পের। সে প্রত্যাশার কথা শুক্রবার হুমকির স্বরে জানিয়ে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট।
তার বক্তব্য অনুযায়ী, অ্যাপলকে হয় অ্যামেরিকায় আইফোন তৈরি করতে হবে, নতুবা বিদেশে তৈরি আইফোনের বিপরীতে গুনতে হবে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ শুল্ক।
এমন বাস্তবতায় অ্যামেরিকায় অ্যাপলের আইফোন তৈরি না হওয়াসহ প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেছে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।
ট্রাম্পের চাওয়া নতুন নয়
অ্যাপলের আইফোন অ্যামেরিকায় তৈরির দাবি এক দশক ধরে করে আসছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রার্থিতার সময় ভোটারদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেছিলেন, অ্যাপলকে দিয়ে কম্পিউটার ও অন্যান্য জিনিস অ্যামেরিকায় তৈরি করাবেন তিনি। যদিও ট্রাম্পের এ প্রত্যাশার বিপরীতে চলছে অ্যাপল।
টেক জায়ান্টটি তাদের কারখানা স্থাপনা করেছে এশিয়ার দেশ চীন, ভারত, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে। প্রতিষ্ঠানটির প্রায় সব পণ্য তৈরি হয় অ্যামেরিকার বাইরে। তাদের আইফোনের ৮০ শতাংশের মতো এখনও তৈরি হয় চীনে।
অ্যাপল কি অ্যামেরিকায় আইফোন তৈরি করতে পারে
অ্যাপল চাইলে অ্যামেরিকায় আইফোন তৈরি করতে পারে, তবে টেক ইনসাইটস নামের বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিশ্লেষক ওয়াইনে ল্যামের মতে, এটি কোম্পানিটির জন্য হবে ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য কাজ।
তার মতে, অ্যামেরিকায় তৈরি করতে গেলে প্রতিটি আইফোনের দাম দ্বিগুণের বেশি বাড়িয়ে দুই হাজার ডলার বা তার বেশি করতে হবে অ্যাপলকে।
ল্যামের ভাষ্য, অ্যামেরিকায় আইফোন তৈরি করতে গেলে অ্যাপলকে নতুন যন্ত্রপাতি কেনার পাশাপাশি আরও বেশি অটোমেশনের ওপর নির্ভর করতে হবে। কারণ অ্যামেরিকার জনসংখ্যা চীনের তুলনায় অনেক কম।
এ বিশ্লেষকের মতে, অ্যামেরিকায় আইফোন তৈরির ধারণাটি অযৌক্তিক।
কেন অ্যামেরিকায় উৎপাদন শুরু করেনি অ্যাপল
সাপ্লাই চেইন বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৫ সালে আইফোন উৎপাদন অ্যামেরিকায় স্থানান্তর হবে বোকামি। আইফোনের বয়স প্রায় ২০ বছর।
অ্যাপলের শীর্ষ নির্বাহীরা জানিয়েছেন, আগামী ১০ বছরের মধ্যে হয়তো আইফোন ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে আসবে। এর জায়গায় আসতে পারে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে মাথায় রেখে তৈরি কোনো ডিভাইস।
বিশ্লেষক ওয়াইনে ল্যাম বলেন, আইফোন ২৯ এলে তিনি বিস্মিত হবেন। কারণ ভিশন প্রোর মতো অগমেন্টেড রিয়েলিটি পণ্য বানাতে গিয়ে আইফোন উৎপাদন ব্যাহত করছে অ্যাপল।
২০১৩ সালে অ্যামেরিকায় ম্যাক ডেস্কটপ কম্পিউটার অ্যাসেম্বলিংয়ের সময় বাজে অভিজ্ঞতাও হয় অ্যাপলের। সে সময় পরের শিফটের কর্মী আসার আগেই অ্যাপলের অ্যামেরিকান কর্মীরা তাদের শিফট শেষ করে অ্যাসেম্বলি লাইন থেকে চলে যেতেন। এর ফলে সাময়িকভাবে উৎপাদন বন্ধ রাখতে হতো অ্যাপলকে।
কী আছে চীনে, যা নেই অ্যামেরিকায়
চীনে অ্যাপল যেসব সুবিধা পায়, তার মধ্যে রয়েছে ছোট হাত, বিশাল মৌসুমি শ্রমশক্তি ও মিলিয়ন মিলিয়ন প্রকৌশলী। চায়নার তরুণী কর্মীদের আঙুল ছোট ছোট। এগুলো আইফোন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। কারণ ছোট ডিভাইসটিতে স্ক্রুসহ অন্য ক্ষুদ্র অংশগুলো স্থাপনে ছোট আঙুলের নারীরা কর্মী হিসেবে বেশি উপযুক্ত।
সম্প্রতি অ্যাপলের এক বিশ্লেষণে দেখা যায়, চীনে যে পরিমাণ দক্ষ কর্মী পাওয়া যায়, সেটি অ্যামেরিকাতে পাওয়া সম্ভব নয়। চীনে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ আছেন, যারা কারখানায় কাজের খোঁজে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছোটেন।
চীনের কর্মীরা প্রায়ই তাদের গ্রীষ্মের মৌসুম থেকে চান্দ্র নববর্ষ নাগাদ কাজ করেন। চীনা নববর্ষের সময় অ্যাপলের উৎপাদনে ধীরগতি থাকে। দেশটির কর্মীদের পুরো বছরের জন্য অর্থ দিতে হয় না অ্যাপলের সরবরাহকারীদের।
এ ছাড়া অ্যাপলের কর্মীরা কারখানার কাছে ডরমিটরিতে থাকেন। এটাও টেক জায়ান্টটির জন্য একটি সুবিধা।
প্রকৌশল খাতে প্রতিভাধর বিপুল লোকজন আছে চীনে। এ বিষয়ে অ্যাপল সিইও টিম কুক ২০১৭ সালে বলেন, চীনে কারখানার যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করা এত প্রকৌশলী আছে যে, তাদের দিয়ে কয়েকটি ফুটবল মাঠ ভরে ফেলা যাবে। অন্যদিকে অ্যামেরিকার কাছে থাকা এমন প্রকৌশলী দিয়ে কোনো রকমে একটি কক্ষ ভরা যাবে।
আইফোন উৎপাদন চীন থেকে সরিয়ে কেন ভারতে নিচ্ছে অ্যাপল
চীন থেকে আইফোন আমদানির ক্ষেত্রে স্থানীয় কর এড়াতে ভারতে উৎপাদন বাড়ানো শুরু করে অ্যাপল। বিশ্বে চীনের পর স্মার্টফোনের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার হিসেবে আবির্ভাব ঘটেছে ভারতের।
অ্যাপল দেশটিতে তাদের বিক্রি বাড়াতে চায়, কিন্তু ভারতের ভেতর কারখানা না থাকলে প্রতিযোগিতামূলক দামে পণ্য বেচতে পারবে না প্রতিষ্ঠানটি। ফলে কারখানা স্থাপনকেই সমাধান হিসেবে দেখেছে টেক জায়ান্টটি।