সিএনএনের প্রতিবেদন
নাৎসি বিতাড়ন আইন ব্যবহার করে অ্যামেরিকানদের নাগরিকত্ব বাতিলের চেষ্টা

টিবিএন ডেস্ক

জুলাই ৫ ২০২৫, ৭:৫১

নাৎসি বিতাড়ন আইনের  ব্যবহারে বিপাকে পড়তে পারে  বৈধ নাগরিকরা। ছবি: সিএনএন

নাৎসি বিতাড়ন আইনের ব্যবহারে বিপাকে পড়তে পারে বৈধ নাগরিকরা। ছবি: সিএনএন

  • 0

উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে এ আইন মূলত সারা দেশের বৈধ অভিবাসীদের মধ্যে ভয় সঞ্চার করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ করে যারা ট্রাম্পের সাথে মতবিরোধে জড়িত তাদেরকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হতে পারে।

কয়েক দশক ধরে পরিচয় গোপন করে অ্যামেরিকান নাগরিকত্ব পাওয়া নাৎসিদের নাগরিকত্ব বাতিলের জন্য ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস একটি আইনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এই আইনের আওতায় অপরাধমূলক অতীত লুকিয়ে রাখা বা রেকর্ড জাল করা ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব বাতিলের অনুমতি দেয়া হয়েছে জাস্টিস ডিপার্টমেন্টকে।

ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে এই আইনের ব্যবহার আরও বিস্তৃত পরিসরে হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সিএনএন জানিয়েছে, গত মাসে জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের জারি করা একটি মেমোতে বলা হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি এমন ব্যক্তিদের এই আইনের আওতায় নাগরিকত্ব বাতিল করা যেতে পারে। এ লক্ষ্যে অ্যাটর্নিদের নাগরিকত্ব বাতিল প্রক্রিয়াকে আরও বিস্তৃত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এই আইন ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতির সাথে অনেকটাই সামঞ্জস্যপূর্ণ।তাই বৃহৎ পরিসরে নাগরিকত্ব বাতিলের এই প্রক্রিয়ার ফলে কয়েক মিলিয়ন ন্যাচারালাইজড অ্যামেরিকান তাদের নাগরিকত্ব হারাতে পারেন এবং বিতাড়িত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।

ডিওজে-র সিভিল ডিভিশনের প্রধান কর্তৃক জারি করা এই মেমোতে বলা হয়েছে, সহিংস অপরাধকারী, গ্যাং এবং মাদক কার্টেলের সদস্য বা সহযোগী অথবা জালিয়াতির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব বাতিলের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।

তবে অনেক কর্মকর্তা এবং বিশ্লেষকদের মতে, উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে এ আইন মূলত সারা দেশের বৈধ অভিবাসীদের মধ্যে ভয় সঞ্চার করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ করে যারা ট্রাম্পের সাথে মতবিরোধে জড়িত তাদেরকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হতে পারে।

কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটির আইন অধ্যাপক ক্যাসান্দ্রা বার্ক রবার্টসন সিএনএনকে বলেন, ‘নাগরিকত্বের অধিকার নিয়ে রাজনীতিকরণ এমন একটি বিষয় যা নিয়ে আমি সত্যই উদ্বিগ্ন। আমি মনে করি এটি আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাথে সম্পূর্ণ অসঙ্গতিপূর্ণ।’

বিতর্কিত এই আইনটি ম্যাকার্থি-যুগের একটি আইনের অংশ যা প্রথম রেড স্কেয়ারের সময়ে কমিউনিস্টদের নির্মূল করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তবে বহু বছর ধরে এই আইনটি যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার হয়ে আসছে।

জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট ১৯৭৯ সালে এই আইনের আওতায় একটি আলাদা ইউনিট প্রতিষ্ঠা করে। যার আওতায় নাৎসিদের সহায়তাকারী কয়েকশ ব্যক্তিকে বিতাড়িত করা হয়। বছরের পর বছর ধরে এর নেতৃত্ব দেন এলি রোজেনবাউম। এই আইনের আওতায় তিনি ১০০ জনের নাগরিকত্ব বাতিল ও বিতাড়নে সক্ষম হন এবং ডিওজে-র সবচেয়ে সফল নাৎসি শিকারী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।

নাজ্জিদের বিতাড়নের বাইরেও বেশ কয়েকবার নাগরিকত্ব বাতিলের জন্য এই আইন সম্প্রসারিত করা হয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ওবামা-যুগের একটি উদ্যোগ যার নাম অপারেশন জানুস। অ্যামেরিকান নাগরিকত্ব লাভের জন্য যারা জন্য পরিচয় গোপন করেছে তাদের ধরতেই এই অপারেশন পরিচালনা করা হয়।

২০২০ সালে নাগরিকত্ব বাতিল প্রক্রিয়া আরও বিস্তৃত করার লক্ষ্যে ট্রাম্প প্রশাসন জাস্টিস অফিসে এই সংক্রান্ত একটি আলাদা অফিস তৈরি করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করলেও পরবর্তীতে বাইডেন প্রশাসন তা বাতিল করে।

জারি করা মেমোতে, সমগ্র সিভিল ডিভিশনকে আইনের মাধ্যমে অনুমোদিত সকল ক্ষেত্রে ডিনাচারালাইজেশনকে (নাগরিকত্ব বাতিল) অগ্রাধিকার দিতে বলা হচ্ছে। পাশাপাশি সারা দেশের অ্যাটর্নিদের অফিসগুলোকে এমন মামলাগুলোকে চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে যেগুলো ডিনাচারালাইজেশনের জন্য আইনের আওতায় পড়ে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ডিওজে-র মুখপাত্র চ্যাড গিলমার্টিন বুধবার বলেন, ট্রাম্প তার প্রথম প্রশাসনের সময় ১০২টি ডিনাচারালাইজেশন মামলা দায়ের করেন যেখানে বাইডেনের অধীনে দায়ের করা মামলা ছিল ২৪টি । ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে এসে এখন পর্যন্ত তার প্রথম পাঁচ মাসে ৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ডিওজে এক বিবৃতিতে সিএনএনকে জানিয়েছে, নাগরিকত্ব লাভের প্রক্রিয়ায় অবৈধভাবে তথ্য সংগ্রহ বা ভুল তথ্য উপস্থাপনকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হলেই কেবল নাগরিকত্ব বাতিল আইন কার্যকর করা হবে।

তবে বর্তমান এবং সাবেক ডিওজে কর্মকর্তারা সিএনএন বলেছেন যে অ্যাটর্নিদের যতটা সম্ভব ডিনার্চাইজেশন মামলা দায়ের করার নির্দেশ দেয়ার বাইরেও, মেমটি এতটাই বিস্তৃত যে এটি জাস্টিস ডিপার্ট্মেন্টকে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব বাতিলের জন্য অস্পষ্ট বা প্রমাণিত হয়নিউ এমন দাবিগুলো উত্থাপন করার অনুমতি দিতে পারে।

হফস্ট্রা ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের অধ্যাপক ইরিনা মান্তা বলেন, প্রশাসনের এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক এবং অন্য যেকোনো ক্ষেত্রে বাকস্বাধীনতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

গত সপ্তাহে, উগান্ডায় জন্মগ্রহণকারী নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র প্রার্থী জোরান মামদানির নাগরিকত্ব বাতিল করার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডিকে তদন্তের আহ্বান জানান রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান অ্যান্ডি ওগলস। ২০১৮ সালে আমেরিকান নাগরিকত্ব লাভ করেন মামদানি। মামদানির নাগরিকত্ব বাতিলের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে একটি র‍্যাপ গানে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে সহায়তাকারী ব্যক্তিদের প্রকাশ্যে মহান হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি।

তবে বন্ডি প্রকাশ্যে এখনও সে চিঠির জবাব দেননি।