
বন্য পরিবেশে কী খায় সিংহ

টিবিএন ডেস্ক
এপ্রিল ২৭ ২০২৫, ২৩:৩৭

সাউথ আফ্রিকার সাবি স্যান্ড গেম রিজার্ভে বেশির ভাগ অংশ খেয়ে ফেলা মহিষের পাশে পুরুষ সিংহ ও তার শাবক। ছবি: উইকিমিডিয়া কমন্স
- 0
বৈজ্ঞানিকভাবে ‘প্যানথেরা লিও’ নামে পরিচিত রাজসিক এ প্রাণী সম্পূর্ণভাবে মাংসনির্ভর। বেঁচে থাকার জন্য এরা শুধু মাংসই খায়।
কখনও কোনো ন্যাচার ডকুমেন্টারি দেখে আপনার মধ্যে হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে, সিংহ আসলে কী খায়, তারা কতটুকু খায়। সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে হাউ স্টাফ ওয়ার্কস ডটকম।
সাইটটি জানিয়েছে, বৈজ্ঞানিকভাবে ‘প্যানথেরা লিও’ নামে পরিচিত রাজসিক এ প্রাণী সম্পূর্ণভাবে মাংসনির্ভর। বেঁচে থাকার জন্য এরা শুধু মাংসই খায়।
আফ্রিকার সাব-সাহারান অঞ্চলের ঘাসযুক্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলের সিংহ কিংবা ভারতের গির ন্যাশনাল পার্কের এশীয় সিংহ দেখতে গেলে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠবে। সেটি হলো প্রচুর পরিমাণে মাংস খায় প্রাণীটি।
সিংহের স্বাভাবিক শিকারের তালিকায় সাধারণত থাকে জেব্রা, উইল্ডবিস্ট কিংবা মহিষের মতো বড় আকৃতির চতুষ্পদ প্রাণী, তবে খাদ্য স্বল্পতার সময় সিংহ যেমন খরগোশ বা পাখির মতো ছোট প্রাণী শিকার করে, তেমনই অন্য শিকারির ফেলে যাওয়া মৃত প্রাণীও খেয়ে নেয়।
সিংহীরাই মূল শিকারি
একটি সিংহের দল বা প্রাইডে সাধারণত সিংহীরাই শিকারের প্রধান দায়িত্ব পালন করে। দলবদ্ধভাবে শিকারের মাধ্যমে তারা সফলতার সম্ভাবনা বাড়িয়ে নেয়। বিশেষ করে বড় আকৃতির প্রাণীর ক্ষেত্রে এমনটা করে তারা। সাধারণত রাতে বা ভোরের শীতল আবহাওয়ায় এ দলবদ্ধ শিকার পরিচালনা করা হয়।
সিংহীরা মূল ভূমিকায় থাকলেও খাবারের সংকট দেখা দিলে পুরুষ সিংহ এবং অপেক্ষাকৃত কম বয়সী সিংহরাও শিকারে অংশ নেয়। তবে বেশির ভাগ সময় প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ সিংহ শিকারের পর এসে সেরা অংশ দাবি করে বসে। বলা চলে খুব ভদ্র অতিথি নয় তারা।
বড় শিকারই সিংহের পছন্দ
সুযোগসন্ধানী শিকারি হলেও সিংহরা সাধারণত বড় আকারের শিকার পছন্দ করে। এসব শিকারের মধ্যে রয়েছে উইল্ডবিস্ট, কেপ মহিষ, জেব্রা কিংবা হরিণজাতীয় প্রাণী। এশীয় সিংহদের শিকারের তালিকায় রয়েছে চিত্রা হরিণ।
স্তন্যপায়ী বড় এসব প্রাণীর ওজন প্রায় সিংহের ওজনের সমান। তাই এগুলো তার কাছে অপেক্ষাকৃত বেশি লাভজনক শিকার, তবে কালাহারি মরুভূমির মতো শুষ্ক এলাকায় কিংবা খাদ্যের সংকটকালে সিংহ ছোট প্রাণী শিকার করতে পারে। এ ছাড়া অন্য শিকারির ফেলে যাওয়া মৃতদেহ খেয়েও বেঁচে থাকে প্রাণীটি।
সিংহ শাবকের খাদ্যাভ্যাস
সিংহ শাবকরা খাবার পেতে পুরোপুরি নির্ভর করে প্রাপ্তবয়স্ক সিংহীদের ওপর। জন্মের পর প্রথম কয়েক মাস শাবকগুলো শুধু মায়ের দুধ পান করে বেঁচে থাকে। মোটামুটি তিন মাস বয়স হওয়ার পর তারা মাংস খাওয়া শুরু করে।
পর্যবেক্ষণ ও খেলার ছলে শিকারের কৌশল শেখে সিংহ শাবকরা, তবে এক বছরের আগে তারা মারাত্মক কোনো শিকারে অংশ নেয় না।
মাঝেমধ্যে প্রভাবশালী পুরুষ সিংহ অন্য সিংহের শাবক হত্যা করে। সিংহীগুলোকে ফের প্রজননক্ষম করে তোলার একটি পদ্ধতি এটি। নিষ্ঠুর হলেও এ পদ্ধতির মাধ্যমে নবীন পুরুষ সিংহের জিন পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে ছড়িয়ে যায়।
সিংহ কি মানুষ খায়
বিষয়টি সত্য। দুর্লভ হলেও কখনও কখনও মানুষ খায় সিংহরা।
এটি স্বাভাবিক আচরণ নয়, তবে খাদ্যের অভাব, আহত অবস্থা কিংবা নিকটস্থ কমিউনিটির মানুষের প্রতি অভ্যস্ততা থেকে মানুষকে সম্ভাব্য শিকার ভাবতে পারে বুনো সিংহ। পূর্ব আফ্রিকা বা সাভোর মতো অঞ্চলের মানুষখেকো সিংহের গল্প শুনলে এমন বাস্তবতা টের পাওয়া যায়। তবে এসব ঘটনা ব্যতিক্রম।
প্রকৃতি সংরক্ষণবাদীরা মনে করেন, মানুষের সঙ্গে সিংহের দ্বন্দ্ব বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ প্রাণীটির আবাসস্থলের কমে যাওয়া এবং তাদের প্রাকৃতিক শিকারের ঘাটতি। এমনটি ঘটে প্রায়শ চোরাশিকার কিংবা অবৈধ বন্যপ্রাণী বাণিজ্যের কারণে। অন্য শিকারিদের সঙ্গে সিংহের প্রতিযোগিতার কারণে এমনটি হয় না।
সিংহরা কতটুকু খায়
খাওয়া শুরু করলে বেশ পরিমাণে গলাধকরণ করে সিংহ। একটি প্রাপ্তবয়স্ক সিংহ একবেলায় নিজের শরীরের ওজনের প্রায় ১৫ শতাংশ পর্যন্ত মাংস খেতে পারে। এর মানে হলো তারা একবারে প্রায় ১৮ কেজি বা ৪০ পাউন্ড মাংস ভক্ষণ করতে পারে।
বাস্তবতা হলো সিংহ প্রতিদিন খায় না। কারণ শিকার করতে গেলে অনেক শক্তি খরচ হয়। তাই একবার পেট ভরে খেয়ে কয়েক দিন বিশ্রাম ও হজম করে কাটিয়ে দেয় বনের রাজা।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা
খাদ্যশৃঙ্খলের শীর্ষে থাকা শিকারি হিসেবে সিংহ পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই আফ্রিকা মহাদেশের বিস্তৃত প্রান্তরে হোক বা ভারতের গভীর অরণ্যের মতো যে জায়গাতেই থাকুক না কেন, তাদের খাদ্যাভ্যাস বোঝাটা জরুরি। এটি সিংহদের কার্যকরভাবে সংরক্ষণের প্রচেষ্টায় সহায়তা করে।