ইরান-ইসরায়েল সংঘাত
সম্ভাব্য জয় কার, সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে?

টিবিএন ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ১৪ ২০২৫, ১০:৪০ হালনাগাদ: ডিসেম্বর ৫ ২০২৫, ০:৪৭

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

  • 0

মধ্যপ্রাচ্য ফের দুলছে যুদ্ধের ধাক্কায়। তেহরানের আকাশে ভোররাতের নিস্তব্ধতা চিড়ে গর্জে ওঠে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান। টার্গেট—ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও সামরিক ঘাঁটি। মুহূর্তেই আগুন, ধোঁয়া আর আতঙ্কে ঢেকে যায় রাজধানী ও এর আশপাশের অঞ্চল। নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটা শুধুই হামলা নয়—একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের শুরু। বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। শুরু হয়েছে হিসাব-নিকাশ—কার হাতে কত শক্তি, কার সেনা কত প্রশিক্ষিত, প্রযুক্তিতে কে কতটা আধুনিক? এই যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত জিতবে কে?

পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে দীর্ঘদিনের টানাপোড়েনের পর অবশেষে সরাসরি সামরিক সংঘাতে জড়িয়েছে ইরান ও ইসরায়েল। শুক্রবার ভোররাতে ইসরায়েলের নজিরবিহীন বিমান হামলার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ ইতোমধ্যে তীব্রতর হয়ে উঠেছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবিসি নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ বহুদিন ধরেই ইরানের অভ্যন্তরে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। গোপনে ড্রোন ঘাঁটি তৈরি করে শুক্রবার প্রথম প্রহরে রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনায় ড্রোন ও যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা চালানো হয়।

প্রথম ধাক্কায় হতবিহ্বল হয়ে পড়ে ইরানি বাহিনী। ইসরায়েলের দাবি, ২০০টিরও বেশি যুদ্ধবিমান অংশ নেয় এই হামলায়, যা আধুনিক ইতিহাসে নজিরবিহীন।

ইরানের দাবি অনুযায়ী, এই হামলায় নিহত হয়েছেন আইআরজিসি প্রধান মেজর জেনারেল হোসেন সালামি ও সশস্ত্র বাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি। নিহত হয়েছেন আরও অন্তত ২০ সামরিক কর্মকর্তা এবং দু’জন শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী।

সবমিলিয়ে প্রায় ৪০০ জনের মতো হতাহতের কথা জানিয়েছে তেহরান।

অন্যদিকে ইরান দাবি করেছে, ইসরায়েলের দুটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয়েছে এবং একজন নারী পাইলট আটক রয়েছেন। ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৫০ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন বলেও জানায় তেহরান, যদিও আইডিএফ এই দাবিকে নাকচ করে দিয়েছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “ইরানের উগ্রপন্থী শাসকদের নির্মূল করে একটি উদার ও আধুনিক প্রজন্মের জন্য সুযোগ তৈরি করাই এই অভিযানের উদ্দেশ্য।”

ওয়াশিংটন সরাসরি এই যুদ্ধের পেছনে নীতিগত সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

যুদ্ধ জিতবে কে?
বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রথাগত অস্ত্র এবং প্রযুক্তিতে ইসরায়েল অনেক এগিয়ে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় গড়ে ওঠা অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও বিমানবাহিনী তাদের বড় শক্তি।

তবে ইরানও অবহেলা করার মতো নয়। তাদের বিশাল সেনাবাহিনী, ড্রোন প্রযুক্তি ও মিসাইল শক্তি যেকোনো মুহূর্তে যুদ্ধের গতিপথ পাল্টে দিতে পারে।

সবচেয়ে বড় ভয় অবশ্যই পারমাণবিক যুদ্ধ। ইসরায়েলের কাছে পরমাণু অস্ত্র থাকার জোরালো সম্ভাবনা থাকলেও ইরান এখনো সেই পথে পৌঁছায়নি। তবে গোপনে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধির গতি যে ভয়াবহভাবে বেড়েছে, সেটি জানিয়েছে আইএইএ।

এই যুদ্ধ শুধু দুটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। পুরো মধ্যপ্রাচ্য এবং বিশ্ব রাজনীতির উপর এর প্রভাব পড়তে বাধ্য। পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে—তা নির্ধারণ করবে শুধু সামরিক শক্তি নয়, কূটনৈতিক কৌশল এবং আন্তর্জাতিক চাপ।