১৪২ বিলিয়ন ডলারে কী ধরনের অ্যামেরিকান অস্ত্র কিনবে সৌদি?

টিবিএন ডেস্ক

মে ১৪ ২০২৫, ০:৩৬

এফ/এ-১৮ হর্নেট স্ট্রাইক ফাইটারের পাখায় যুক্ত করা হচ্ছে এআইএম-১২০ ক্ষেপণাস্ত্র। ক্ষেপণাস্ত্রটি সৌদি-অ্যামেরিকা অস্ত্র চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ছবি: রয়টার্স

এফ/এ-১৮ হর্নেট স্ট্রাইক ফাইটারের পাখায় যুক্ত করা হচ্ছে এআইএম-১২০ ক্ষেপণাস্ত্র। ক্ষেপণাস্ত্রটি সৌদি-অ্যামেরিকা অস্ত্র চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ছবি: রয়টার্স

  • 0

চুক্তির আওতায় অ্যামেরিকা থেকে সৌদি কী ধরনের অস্ত্র কিনবে, তার বেশ কয়েকটির নাম জানিয়েছে আবুধাবিভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল।

মধ্যপ্রাচ্য সফরের প্রথম দিন মঙ্গলবার সৌদি আরবে গিয়ে দেশটির সঙ্গে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি করেছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এ চুক্তিকে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রতিরক্ষাসামগ্রী বিক্রয় চুক্তি’ হিসেবে অভিহিত করেছে হোয়াইট হাউস।

চুক্তির আওতায় অ্যামেরিকা থেকে সৌদি কী ধরনের অস্ত্র কিনবে, তার বেশ কয়েকটির নাম জানিয়েছে আবুধাবিভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল।

সৌদির সশস্ত্র বাহিনী ও অ্যামেরিকার প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলোর বিশাল প্রাপ্তি

১৪২ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির আওতায় অ্যামেরিকার কাছ থেকে সৌদি যেসব অস্ত্র কিনবে, তার মধ্যে আছে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, সাঁজোয়া যান ও বিমান।

এ চুক্তিকে সৌদি আরবের সশস্ত্র বাহিনী ও অ্যামেরিকার প্রতিরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর জন্য বিশাল প্রাপ্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

চুক্তির উল্লেখযোগ্য অংশ হলো উন্নতমানের এক হাজার আকাশ থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র। এর বাইরে রয়েছে দুই হাজার ‘প্রিসিশন কিল সিস্টেম’ রকেট। এ ছাড়া টার্মিনাল হাই অল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স বা থাড এবং প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাও এ চুক্তিতে থাকতে পারে।

মহাকাশ সামর্থ্য বৃদ্ধি, সমুদ্রসীমা ও উপকূল নিরাপত্তা

চুক্তিতে সৌদির মহাকাশ সামর্থ্য বৃদ্ধি, সমুদ্রসীমা ও উপকূলের নিরাপত্তা এবং স্থলবাহিনীগুলোর আধুনিকায়নে সহায়তার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে পুরোনো সরঞ্জামের জায়গায় বড় ধরনের উন্নতি দেখতে পাবে সৌদি ন্যাশনাল গার্ড। তাদের কাছে আসবে আট চাকার সাঁজোয়া যান। সম্ভবত তারা ব্যাপকভাবে কার্যকর ‘স্ট্রাইকার’ সাঁজোয়া যান পেতে যাচ্ছে।

চুক্তির আওতায় থাকা অন্যান্য সরঞ্জাম হলো সর্বাধুনিক ডিজাইনের সি-১৩০ পরিবহন বিমান ও নতুন রেডিও যোগাযোগব্যবস্থা।

কী বলছেন বিশেষজ্ঞ

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অ্যামেরিকার উন্নত প্রযুক্তির ‘গ্লোবাল হক’ ড্রোন কেনার অনুরোধ করেনি সৌদি আরব। কারণ এ ধরনের বেশ কয়েকটি ড্রোন মধ্যপ্রাচ্যে ভূপাতিত করা হয়েছে।

লকহিড মার্টিন নির্মিত এফ-৩৫ স্টিলথ বিমান কেনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিমানটি কয়েক বছর ধরেই কিনতে চাইছিল সৌদি, তবে এ বিমান সরবরাহের চুক্তি খুব শিগগিরই হচ্ছে না।

অ্যামেরিকার সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে সামরিক বিশেষজ্ঞ ও ডিফেন্স আই সম্পাদক ফ্রান্সিস টুসা বলেন, এর মাধ্যমে সৌদির সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়ন হবে।

তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবের সশস্ত্র বাহিনীকে দীর্ঘ সময়ের জন্য প্রাসঙ্গিক ও সুরক্ষিত রাখা উচিত এ প্যাকেজের।’

চুক্তিটি বৃহত্তর একটি প্যাকেজের আওতাভুক্ত। হোয়াইট হাউসের তথ্য অনুযায়ী, প্যাকেজটি ৬০০ বিলিয়ন ডলারের।

আকাশ থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র

চুক্তির আওতায় অ্যামেরিকার কাছ থেকে ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নত প্রযুক্তির এক হাজার মধ্যপাল্লার আকাশ থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র কিনবে সৌদি। ‘এআইএম-১২০সি-৮’ ক্ষেপণাস্ত্রটি উচ্চ সক্ষমতার জন্য পরিচিত। এটি চীন নির্মিত পিএল-১৫-এর মতো। পিএল-১৫ দিয়ে ভারতীয় বিমান বাহিনীর কমপক্ষে একটি রাফাল যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে পাকিস্তান।

ক্ষেপণাস্ত্রটি ২০ কেজি ওয়্যারহেড নিয়ে ১৬০ কিলোমিটার দূরে আঘাত হানতে পারে। এটি ম্যাচ ৪ গতিতে দিনে-রাতে যেকোনো আবহাওয়ায় অভিযানে যেতে সক্ষম।

উন্নত প্রযুক্তির ‘প্রিসিশন কিল’ অস্ত্র

চুক্তির অধীনে উন্নত প্রযুক্তির প্রিসিশন কিল উইপন সিস্টেমস বা এপিকেডব্লিউএস কিনবে সৌদি। এটি লেজার নিয়ন্ত্রিত হালকা রকেট, যা হেলিকপ্টার বা যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া হয়।

রকেটগুলো ১১ কিলোমিটার পর্যন্ত লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারে। সেকেন্ডে এর সর্বোচ্চ গতি এক হাজার মিটার।

১৫ কেজি ওজনের এ অস্ত্রের মাধ্যমে অনিচ্ছাকৃত ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায়। প্রতিটি রকেটের মূল্য ২২ হাজার ডলার।

সৌদি আরব সাপোর্ট সিস্টেমসহ এমন দুই হাজার রকেট কেনার আদেশ দিয়েছে।

স্ট্রাইকার হুইলস

স্টাইকার হুইলস সাঁজোয়া যানগুলো আট চাকার, যেগুলো যুদ্ধে পরীক্ষিত। তিন দশক ধরে অ্যামেরিকার ব্রিগেডগুলোর যুদ্ধ দলের ভরসা হয়ে আছে যানটি।

১৮ টনের এ যানে চড়তে পারেন ৯ জন সেনা। এতে দশমিক ৫০ ক্যালিবারের ভারী মেশিন গান বা ১৫০ মিলিমিটার বন্দুক যুক্ত থাকে।

ইরাকে ২০০৩ সালে অ্যামেরিকার আগ্রাসনের সময় এবং আফগানিস্তানে সামরিক অভিযানে স্ট্রাইকার মোতায়েন করা হয়।

উত্তর সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে অ্যামেরিকার বিশেষ বাহিনীর লড়াইয়েও এ যান ব্যবহার করা হয়।