করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ইজি.ফাইভ
টিবিএন ডেস্ক
আগস্ট ৯ ২০২৩, ১৬:৩৫
- 0
অ্যামেরিকায় ছড়িয়ে পড়ছে করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ইজি.ফাইভ।
অ্যামেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে নতুন করে কোভিড-নাইন্টিন পজিটিভের ১৭ শতাংশই ইজি.ফাইভ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত।
তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এক্সবিবি.ওয়ান.সিক্সটিন। কোভিড-নাইন্টিনের সবচেয়ে সাধারণ ক্যাটাগরি এক্সবিবিতে আক্রান্তের হার ১৬ শতাংশ।
ইজিকে করোনা ভাইরাসের সম্পূর্ণ নতুন ভ্যারিয়েন্ট মনে হলেও এটি ওমিক্রনের এক্সবিবি রিকম্বিন্যান্ট স্ট্রেইনের একটি পরিবর্তিত রূপ। আগে ভ্যারিয়েন্টের থেকে এর খুব বেশি পরিবর্তন ঘটেনি।
ইজি.ফাইভের আগের ভ্যারিয়েন্ট এক্সবিবি.ওয়ান.নাইন.টুয়ের সঙ্গে তুলনা করে দেখা যায়, এটির ফোর হান্ড্রেড সিক্সটি ফাইভ নাম্বার পজিশনের স্পাইকে একটি অতিরিক্ত মিউটেশন ঘটেছে। এর আগে করোনাভাইরাসের অন্য ভ্যারিয়েন্টেও এই মিউটেশন দেখা গেছে।
তবে এই মিউটেশন ভাইরাসটিকে নতুন কোন ধরনের ক্ষমতা দিচ্ছে তা নিশ্চিত নন বিজ্ঞানীরা। নতুন এক্সবিবির বহু ভ্যারিয়েন্টে এই মিউটেশন দেখা যাওয়ায় ভ্যারিয়েন্ট হান্টাররা ইজি.ফাইভের ওপর বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছেন।
বিশ্বব্যাপী নথিভুক্ত করোনা ভাইরাস সিকোয়েন্সগুলোর প্রায় ৩৫ শতাংশের মধ্যে ফোর হান্ড্রেড সিক্সটি ফাইভ মিউটেশনের উপস্থিতি দেখা গেছে।
অ্যামেরিকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অন্য এক ভ্যারিয়েন্ট এফএল.ওয়ান.ফাইভ.ওয়ানে আক্রান্তের হারও আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এটি পূর্ববর্তী ভ্যারিয়েন্টগুলোর তুলনায় এক ধরনের বিবর্তনীয় সুবিধা বহন করছে।
ইজি.ফাইভও এখন আর একা নেই। সামান্য পরিবর্তনে নিজস্ব শাখা, স্পাইকে দ্বিতীয় দফার মিউটেশনে ইজি.ফাইভ.ওয়ান তৈরি করেছে। ভ্যারিয়েন্টের নতুন ভার্সনটিও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ডক্টর ডেভিড হো তার ল্যাবে এই ভ্যারিয়েন্টগুলো অ্যান্টিবডির বিরুদ্ধে কী পরিমাণ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে সেটি পরীক্ষা করে দেখছেন।
মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজির প্রফেসর হো সিএনএনকে এক ইমেইলে বলেন, ‘করোনা সংক্রমিত ও টিকা নেয়া ব্যক্তিদের দেহে থাকা সিরামের অ্যান্টিবডির ক্ষেত্রে ইজি.ফাইভ ও তার নতুন ভার্সন বেশি প্রতিরোধী।’
তিনি দাবি করেন, ক্লিনিক্যালি এই ভ্যারিয়েন্টগুলো তাদের আগের ভাইরাসের চেয়ে খুব বেশি আলাদা বা আরও গুরুতর বলে মনে হয় না।
স্ক্রিপস ট্রান্সলেশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের কার্ডিওলজিস্ট ড. এরিক টোপোল বলেন, ‘এক্সবিবি সিরিজের তুলনায় এটির কিছুটা বেশি ইমিউন এস্কেপ রয়েছে। ফলে এটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে।’
অ্যামেরিকার বাইরে, ইজি.ফাইভ আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, বৃটেইন, জাপান ও চায়নায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিওএইচও) সম্প্রতি এটিকে ভ্যারিয়েন্টস আন্ডার মনিটরিং তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
অ্যামেরিকায় এ ভ্যারিয়েন্টে কেস, জরুরি পরিষেবার সাহায্য নেয়া ও হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বাড়ায় দেশটিতে ইজি.ফাইভ প্রকট হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। অবশ্য নির্দিষ্ট কোনো স্ট্রেইন এই বৃদ্ধির পেছনে দায়ী সে বিষয়ে কোনো নিশ্চিত প্রমাণ মেলেনি।
বরং এপিডেমিওলজিস্টরা মনে করেন, মানুষের আচরণই এই বৃদ্ধির মূল কারণ।
তাদের দাবি, অ্যামেরিকার রেকর্ড তাপমাত্রায় মানুষজন আরও বেশি ঘরমুখী। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের সুবিধা নিতে তারা আগের তুলনায় বেশি বদ্ধ জায়গায় থাকতে শুরু করেছে। আর যেকোনো বদ্ধ পরিবেশ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম সহায়ক।
এছাড়া, গ্রীষ্মের ছুটিতে বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ মানুষকে তাদের স্বাভাবিক সামাজিক বৃত্তের বাইরে পাঠাচ্ছে। ফলে বাড়ছে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা। দেশটির অনেক অংশে স্কুলগুলও আবার সেশনে ফিরে যাচ্ছে। সুতরাং শিক্ষার্থীদের বাবা-মায়ের জেনে রাখা উচিত, হোমওয়ার্ক ছাড়াও তাদের বাচ্চারা ভাইরাসের মতো মারাত্মক জিনিস নিয়ে বাড়ি ফিরছে।
ইয়েল স্কুল অফ পাবলিক হেলথের এপিডেমিওলজি অফ মাইক্রোবিয়াল ডিজিজ ডিপার্টমেন্টের পোস্টডক্টরাল অ্যাসোসিয়েট ড. অ্যান হান বলেন, ‘ভাইরাসের এতো ভয়াবহতার পরেও আশাবাদী হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। আমার ধারণা, এই ভ্যারিয়েন্ট এতটাও খারাপ হবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশাল জনসংখ্যাই এখনও অনাক্রান্ত। তাদের সঙ্গে আক্রান্তের সংমিশ্রণের হিসেবে খুব কম বেসলাইন থেকে শুরু করছি। তবে শিগগিরি এটি ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ার বিরুদ্ধে কথা বলবে। অবশ্য শীতের সময় এই নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলো কী করবে তা দেখার বিষয়।’
ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তারা আপডেট ডোজ তৈরির আশা করছেন। তবে সিডিসি ডিরেক্টর ড. ম্যান্ডি কোহেনের ধারণা, ভ্যাকসিনের আপডেট ডোজ মিলবে অক্টোবরে। নতুন ভ্যাকসিনের অনুমোদনের জন্য ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সাইন-অফ ও সিডিসির সুপারিশ প্রয়োজন হবে।