
তালেবানকে স্বীকৃতি রাশিয়ার, প্রতিবেশী দেশগুলোর অবস্থান কী?

টিবিএন ডেস্ক
জুলাই ৪ ২০২৫, ১৯:০৪

কাবুলে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি জিরনভ বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ছবি: এক্স
- 0
রাশিয়ার এ স্বীকৃতির পর তালেবানের বিষয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর অবস্থান প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে আল জাজিরা।
প্রথম দেশ হিসেবে আফগানিস্তানে ২০২১ সালে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া। কয়েক বছর ধরে নীরব সম্পৃক্তির পর একসময়ের শত্রু গোষ্ঠীটির নেতৃত্বাধীন সরকারকে এ স্বীকৃতি দিল মস্কো।
রাশিয়ার এ স্বীকৃতির পর তালেবানের বিষয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর অবস্থান প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে আল জাজিরা।
চার বছর আগের আগস্টে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সরকারের কাছ থেকে কাবুলের দখল নেয় তালেবান। সেই থেকে একসময়ের শত্রু রাষ্ট্রসহ অনেক দেশ তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ করে, কিন্তু বৃহস্পতিবারের আগে কোনো দেশই আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি আফগানিস্তানের বর্তমান সরকারকে।
রাশিয়ার ভাষ্য
তালেবানকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে বিবৃতি প্রকাশ করে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, তালেবান সরকারকে মস্কোর স্বীকৃতি আফগানিস্তানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার পথ তৈরি করবে।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়, জ্বালানি, পরিবহন, কৃষি ও অবকাঠামো খাতে তালেবানের সঙ্গে সহযোগিতা চায় রাশিয়া।
তালেবানের প্রতিক্রিয়া কী
আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বৃহস্পতিবার প্রতিক্রিয়া জানায়। পোস্ট বলা হয়, কাবুলে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত দিমিত্রি জিরনভ আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দিমিত্রি তালেবান সরকারকে ক্রেমলিনের স্বীকৃতির বিষয়টি মুত্তাকিকে জানান।
অন্য দেশগুলোর অবস্থান
তালেবানকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। তালেবান প্রশাসনকে ‘তালেবান কার্যত কর্তৃপক্ষ’ হিসেবে বিবেচনা করে জাতিসংঘ। আফগানিস্তানের বর্তমান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না দিয়েও কয়েকটি দেশ সম্প্রতি কূটনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত হয়েছে তালেবানের সঙ্গে।
চীন: আফগানিস্তান থেকে অ্যামেরিকান সেনা প্রত্যাহারের আগেই তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে চীন। দেশটি ২০১৯ সালে তালেবান নেতাদের অংশগ্রহণে শান্তি আলোচনার আয়োজন করে, তবে তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের পর চীনের সঙ্গে গোষ্ঠীটির সম্পর্ক বেড়ে যায়।
চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কোম্পানি-সিএনপিসির অধীন একটি প্রতিষ্ঠান তালেবানের সঙ্গে ২৫ বছরের চুক্তি করে। এর লক্ষ্য আফগানিস্তানের আমু দরিয়া নদীর তলদেশ থেকে তেল আহরণ। তালেবানের ক্ষমতা গ্রহণের পর এটিই ছিল আফগানিস্তানে প্রথম বড় ধরনের বিদেশি বিনিয়োগ।
২০২৪ সালে তালেবানের সাবেক মুখপাত্র বিলাল করিমকে চীনে আফগানিস্তানের আনুষ্ঠানিক দূত হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। যদিও দেশটি পরিষ্কারভাবে জানায় যে, তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিচ্ছে না তারা।
পাকিস্তান: একসময় তালেবানের প্রধান আন্তর্জাতিক সমর্থক পাকিস্তানের সঙ্গে গোষ্ঠীটির সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে ২০২১ সাল থেকে। তালেবানের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের মাটিতে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করেছে ইসলামাবাদ। বিশেষত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান বা টিটিপিকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে পাকিস্তানের। পাকিস্তানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক প্রাণঘাতী হামলার জন্য দায়ী এ গোষ্ঠীটিকে আশ্রয়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছে আফগানিস্তান।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ২০২৪ সালে আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী পাকতিয়া প্রদেশে বিমান হামলা চালায়। টিটিপি যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে এ হামলা চালানোর দাবি করে পাকিস্তান, তবে আফগানিস্তানের অভিযোগ, হামলায় নিহত হন ৪৬ বেসামরিক নাগরিক। চলতি বছর আফগান শরণার্থীদের বিতাড়ন শুরু করে পাকিস্তান। এতে সম্পর্কের আরও অবনতি হয়।
দুই পক্ষের মধ্যে এমন নেতিবাচক বাস্তবিক সম্পর্কের মধ্যেও আফগানিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করছে পাকিস্তান। চলতি বছরের এপ্রিলে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকি ও অন্য আফগান কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাবুলে সাক্ষাৎ করেন। মে মাসে আবার কথা বলেন দার ও মুত্তাকি।
ভারত: তালেবানের ক্ষমতা গ্রহণের পর ১৯৯৬ সালে কাবুল দূতাবাস বন্ধ করে দেয় নয়াদিল্লি। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রক্সি হিসেবে বিবেচনা করা গোষ্ঠীীটিকে স্বীকৃতি দিতে চায়নি ভারত। ২০০১ সালে তালেবান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর কাবুলে দূতাবাস ফের চালু করে নয়াদিল্লি, তবে এর পরের বছরগুলোতে দূতাবাস ও ভারতীয় কনস্যুলেটগুলো তালেবান ও হাক্কানি গ্রুপের মতো অন্য সংগঠনগুলোর হাতে বারবার হামলার শিকার হয়। তা সত্ত্বেও তালেবানের ক্ষমতায় ফেরা এবং পাকিস্তানের সঙ্গে চরম উত্তেজনার মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে ভারত।
কাবুলে ২০২১ সালে দূতাবাস ফের চালু করার পাশাপাশি তালেবান কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য কূটনীতিকদের পাঠায় ভারত। চলতি বছরের জানুয়ারিতে মুত্তাকির সঙ্গে বৈঠকের জন্য দুবাইয়ে উড়ে যান ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। মে মাসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ফোনে মুত্তাকির সঙ্গে কথা বলেন।
ইরান: রাশিয়া ও ভারতের মতো ইরানও নব্বইয়ের দশকে আফগান শাসন করা তালেবানকে শত্রুতার দৃষ্টিতে দেখত। ১৯৯৮ সালে মাজার-ই-শরিফে ইরানের কূটনীতিকদের হত্যা করে তালেবান যোদ্ধারা, যা সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটায়, তবে তালেবানের চেয়ে আইএসআইএস-কেকে আরও বড় হুমকি মনে করে তেহরান।
তালেবান কাবুলের ক্ষমতায় ফেরার পর গোষ্ঠীটির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া শুরু করে ইরান। এর আগেই অবশ্য পর্দার আড়ালে গোষ্ঠীটির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে তেহরান। গত ১৭ মে তেহরান ডায়ালগ ফোরামে যোগ দিতে মুত্তাকি ইরান সফর করেন। সে সময় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ও প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন মুত্তাকি।