ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সামরিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) একটি জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছে। সোমবার ভিয়েনায় সংস্থার সদর দপ্তরে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি কেবল একটি বৈঠক নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যে পারমাণবিক নিরাপত্তা ঘিরে উদ্বেগ বাড়ার প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক মুহূর্ত।
সম্প্রতি ইরানের নাতানজ ও ফরদো পারমাণবিক স্থাপনায় সন্দেহজনক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অভিযোগ উঠেছে। যদিও ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে এ হামলার দায় স্বীকার করেনি, তবে তেহরান সরাসরি ইসরায়েলকেই দায়ী করছে।
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার পরিচালক রাফায়েল গ্রোসি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সংস্থার পরিদর্শক দল বর্তমানে ইরানের বেশ কিছু স্থাপনায় কাজ করছে। এই মুহূর্তে কোনো স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না, তা যাচাই করতে আমরা বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছি।’
তিনি আরও জানান, ‘যেকোনো সামরিক হামলা পারমাণবিক স্থাপনার নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।’
ভিয়েনায় আয়োজিত বৈঠকে সংস্থার বোর্ড সদস্য ৩৫টি দেশের প্রতিনিধি অংশ নেবেন। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত এবং মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দেশ।
তেহরানের পক্ষ থেকেও পর্যবেক্ষক প্রতিনিধি উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। আলোচনায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি, পরিদর্শনের স্বচ্ছতা এবং হামলার পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
ইরান-ইসরায়েলের এই উত্তেজনা ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার আশঙ্কাজনক দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করে দুই দেশকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “পরমাণু স্থাপনায় হামলা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী এবং এর ফলাফল হতে পারে ভয়াবহ।”
এর আগেও ২০২১ সালে ইরানের নাতানজ কেন্দ্রে বিস্ফোরণ ঘটেছিল, যার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছিল তেহরান। তবে এবার পরিস্থিতি আরও জটিল। কারণ, সরাসরি যুদ্ধংদেহী অবস্থানের মধ্যে এবার এই হামলা এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার তৎপরতা, বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ প্রচেষ্টার ভবিষ্যত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সোমবারের বৈঠক পরিস্থিতির সাময়িক বিশ্লেষণ হলেও এটি দীর্ঘমেয়াদে বড় সিদ্ধান্তের সূচনা হতে পারে। এর মাধ্যমে হয়তো আন্তর্জাতিক পরমাণু নিরাপত্তা ও মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক ভারসাম্যের নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে।