
ভারত-পাকিস্তান সংঘাত কি সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নিচ্ছে?

টিবিএন ডেস্ক
মে ১০ ২০২৫, ০:৪৭

ভারত ও পাকিস্তানের পতাকা, যুদ্ধবিমান ও সেনা। গ্রাফিক্স: টিবিএন
- 0
পাকিস্তানের তিনটি বিমান ঘাঁটিতে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে ইসলামাবাদ। এর আগে পাঞ্জাবে পাকিস্তানের ড্রোন হামলায় তিনজন আহত হওয়ার দাবি করেছিল ভারতের পুলিশ। এমন বাস্তবতায় দেশ দুটির সংঘাত সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে ২২ এপ্রিলের প্রাণঘাতী হামলার প্রতিক্রিয়ায় ৭ মে শুরুর সময়টাতে পাকিস্তানের ৯টি অবস্থানে হামলা চালায় ভারত। এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতের ওপরও হামলা চালায় পাকিস্তান।
প্রথম দিনের হামলার পর ভারতের সতর্ক প্রতিক্রিয়া এবং পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় যুদ্ধ দীর্ঘায়িত না হওয়ার সম্ভাবনা দেখেছিলেন বিশ্লেষকরা, কিন্তু তিন দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরও সীমান্তবর্তী দুই দেশের উত্তেজনা প্রশমন হয়নি।
সর্বশেষ পাকিস্তানের তিনটি বিমান ঘাঁটিতে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে ইসলামাবাদ। এর আগে পাঞ্জাবে পাকিস্তানের ড্রোন হামলায় তিনজন আহত হওয়ার দাবি করেছিল ভারতের পুলিশ।
এমন বাস্তবতায় দেশ দুটির সংঘাত সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
প্রায় অর্ধশত প্রাণহানি
ভারত ও পাকিস্তানের সর্বশেষ সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৪৮ জন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এর মধ্যে পাকিস্তানে কমপক্ষে ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। অন্যদিকে ভারতে নিহত হন ১৭ জন, যাদের মধ্যে একজন সেনা সদস্য রয়েছেন।
দুই দেশের নিহতের এ সংখ্যা চোখে পড়ার মতো। এটি ভুক্তভোগী জনগণের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করবে। সে ক্ষোভের প্রতিফলন দেখা যেতে পারে দুই দেশের রাজনীতিক ও সামরিক বাহিনীর আচরণে।
হামলা অব্যাহত
যুদ্ধ পরিস্থিতিতে প্রকৃত সত্য জানা মুশকিল হলেও ভারত ও পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী, দুই দেশের বাহিনীই পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
সংঘাতের তৃতীয় দিন শুক্রবার রাতে ভারতের পাঞ্জাবের ফিরোজপুরে পাকিস্তান থেকে ছোড়া ড্রোনে একই পরিবারের তিনজন আহত হন বলে জানায় স্থানীয় পুলিশ। এর আগে ভারতের সেনাবাহিনী একই দিনে জানায়, দেশটির ২৬টি অবস্থানে পাকিস্তানি ড্রোন দেখা গেছে।
দেশটির দাবি, বৃহস্পতিবার পাকিস্তান ৩০০ থেকে ৪০০টি ড্রোন ছুড়েছিল ভারতের দিকে।
অন্যদিকে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার শুক্রবার জানান, দেশটি ইসরায়েলে তৈরি ৭৭টি ভারতীয় হ্যারোপ ড্রোন ভূপাতিত করেছে। এর আগে ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছিল পাকিস্তান।
সর্বশেষ শনিবার শুরুর সময়ে পাকিস্তান তার তিন বিমান ঘাঁটিতে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে। একই সঙ্গে আফগানিস্তানে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে বলেও দাবি করে ইসলামাবাদ।
বিমান ঘাঁটিতে হামলা কতটা গুরুতর
পাকিস্তান আইএসপিআরের ডিজি লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী বলেন, ‘নগ্ন আগ্রাসন অব্যাহত রেখে ভারত তাদের বিমান থেকে আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর নূর খান ঘাঁটি, মুরিদ ঘাঁটি এবং শরকত ঘাটিকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তান বিমান বাহিনীর সব সম্পত্তি অক্ষত আছে।’
বিমান ঘাঁটিতে হামলার দাবির পর রাত সোয়া তিনটা থেকে শনিবার দুপুর নাগাদ দেশের আকাশসীমা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় পাকিস্তান বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
পাল্টা হামলা শুরুর ঘোষণা পাকিস্তানের
পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন পিটিভি জানায়, ‘ভারতীয় আগ্রাসনের’ বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর বদলা নেওয়া শুরু হয়েছে।
আইএসপিআর ডিজি তিনটি বিমান ঘাঁটি আক্রান্ত হওয়ার খবর জানানোর পরপরই পিটিভি এমন ঘোষণা দেয়।
সংঘাত কি রূপ নিচ্ছে সর্বাত্মক যুদ্ধে
পাকিস্তানের বিমান ঘাঁটিতে হামলার বিষয়ে ভারত তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি, তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে পাকিস্তান।
দেশটি যদি ভারতে বড় ধরনের হামলা করে, তাহলে স্বাভাবিক কারণেই প্রতিক্রিয়া দেখাবে নয়াদিল্লি। সে ক্ষেত্রে বর্তমান সংঘাত সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নেওয়ার বড় ধরনের আশঙ্কা রয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বিমান ঘাঁটিতে হামলার বিষয়ে পাকিস্তানের দাবি এবং পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর অভিযান শুরুর খবর জানানো হয়েছে।
এমন বাস্তবতায় লাহোরে থাকা আল জাজিরার রিপোর্টার ওসামা বিন জাভেদ বলেন, উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার বিষয়টি প্রতীয়মান হচ্ছে। পাকিস্তানের নিরাপত্তা সূত্রগুলো তিনটি বিমান ঘাঁটিতে ভারতের আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দাবি করেছে। যদিও তারা বলেছে, হামলা প্রতিহত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক নিউ লাইন্স ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসির জ্যেষ্ঠ পরিচালক কামরান বোখারি বলেন, পাকিস্তানের বিমান ঘাঁটিগুলোকে ভারত লক্ষ্যবস্তু বানানোয় পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। রাওয়ালপিণ্ডি ও অন্যান্য বিমান ঘাঁটিতে আঘাত হানার পর যুদ্ধ বাজে পরিণতির দিকে মোড় নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখন অনেক বড় পরিসরের যুদ্ধ দেখতে পাচ্ছি।’