অ্যামেরিকায় প্রতি ৫ জনের ১ জন আগ্নেয়াস্ত্র হুমকির শিকার

টিবিএন ডেস্ক

এপ্রিল ১১ ২০২৩, ১৮:১৪

অ্যামেরিকায় প্রতি ৫ জনের ১ জন আগ্নেয়াস্ত্র হুমকির শিকার
  • 0

অ্যামেরিকায় প্রতি পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে অন্তত একজন তাদের জীবনের কোনো না কোনো সময়ে আগ্নেয়াস্ত্র বিষয়ক হুমকির মুখোমুখি হয়েছেন।

ক্যায়সার ফ্যামিলি ফাউন্ডেশনের জরিপের বরাতে এমন তথ্য প্রকাশ করেছে এবিসি নিউজ।  

চলতি বছরের ১৪ থেকে ২৩ মার্চের মধ্যে ঘটে যাওয়া গান ভায়োলেন্সের উপর বিশেষ জোর দিয়ে মঙ্গলবার জরিপটি প্রকাশ করা হয়। 

অ্যামেরিকায় গান ভায়োলেন্স এবং সেসব ঘটনার সরাসরি মুখোমুখি হওয়া ১২৭১ জন অ্যামেরিকানের অভিজ্ঞতার তথ্য রয়েছে এ প্রতিবেদনে। 

জরিপে প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে অন্তত একজন বলেছেন, তার পরিবারের ন্যূনতম এক জন সদস্য আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন (আত্মহত্যাসহ)। প্রায় ছয় জনের মধ্যে একজন জানান, তারা আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে কাউকে না কাউকে আহত হতে দেখেছেন। 

প্রতিবেদনটি বলছে, অর্ধেকের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক অ্যামেরিকান কোনো না কোনোভাবে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে প্রভাবিত হয়েছেন। তারা নিজেরা আহত অথবা তাদের পরিবারের কোনো না কোনো সদস্য গুলিতে হতাহত হয়েছেন অথবা হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন কিংবা আত্মরক্ষায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবাহার করেছেন।

শ্বেতাঙ্গ প্রাপ্তবয়স্ক অ্যামেরিকানদের তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গ প্রাপ্তবয়স্করা বেশি গান ভায়োলেন্সের শিকার হয়েছেন। অ্যামেরিকায় জাতিগত বৈষম্যের কথা তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকেরা জানিয়েছেন, তাদের পরিবারে আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে মৃত্যুর হার হিস্পানিকদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। 

কৃষ্ণাঙ্গ এবং হিস্পানিক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ বলছেন, তারা ‘দৈনিক’ বা ‘প্রায় প্রতিদিনই’ উদ্বিগ্ন থাকেন এটা ভেবে যে, তাদের পরিবারের কেউ হয়ত যেকোনো সময় গান ভায়োলেন্সের শিকার হবেন। 

জন্স হপকিন্স হসপিটালের সহযোগী অধ্যাপক, ট্রমা সার্জন ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং গান ভায়োলেন্স প্রতিরোধে জাতীয় পর্যায়ে কাজ করা ডা. জোসেফ সাকরান বলেন, ‘আমি নিজে গান ভায়োলেন্সের থেকে বেঁচে ফিরেছি। যখনই আপনি এই সমস্যার জটিলতা নিয়ে চিন্তা করবেন, দেখবেন এটি আমাদের সমাজের বিভিন্ন সেক্টরে জড়িয়ে আছে।‘ 

তিনি বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার পক্ষে একা এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। গান ভায়োলেন্স এক জটিল সমস্যা। আমাদের শহর, স্টেইট এমনকি পুরো দেশের অগণিত অ্যামেরিকানকে প্রতিনয়ত এ সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।‘ 

গান ভায়োলেন্সের সঙ্গে সামগ্রিক জনস্বাস্থ্যের সম্পর্ক তুলে ধরে ডা. জোসেফ বলেন, ‘ম্যাস শুটিং আমাদের সামগ্রিক জনস্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে খুবই ছোট একটি অংশ। বিশাল আইসবার্গের টিপের মতোই ছোট সমস্যা ম্যাস শুটিং, কিন্তু আইসবার্গের বিশালতার মতোই এর প্রভাব।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন ঘটে চলা অসংখ্য গান ভায়োলেন্স নিয়ে কথা বলা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। জাতিগত বৈষম্যের শিকার তরুণ সম্প্রদায়ের ভোগান্তির কথা সর্ব জায়গায় ছড়িয়ে দিতে হবে। শ্বেতাঙ্গ, অশ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ সবার সম্মিলনেই আমাদের শহর ও স্টেইটের সৌন্দর্য ফুটে উঠে। জাতিগত এবং গায়ের রঙের ভিন্নতার জেরে গুলি ছোড়া স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হওয়ার আগেই আমাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।‘

অন্য স্বাস্থ্য সচেতনতা ক্যাম্পেইনের মতো গান সেইফটি নিয়েও কথা বলার তাগিদ দিচ্ছেন ডা. জোসেফ। 

জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্করা বলেছেন তাদের সঙ্গে কোনো ডাক্তার বা স্বাস্থ্যসেবাদানকারী গান সেইফটি নিয়ে কথা বলেছেন এবং আগ্নেয়াস্ত্র নিরাপদে রাখার বিষয়ে সতর্ক করেছেন। 

প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, অ্যামেরিকায় দিন দিন আগ্নেয়াস্ত্র কেনার হার বাড়ছে। অনেকেই নিজের এবং পরিবারের সুরক্ষার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র কিনে থাকেন। প্রতি ১০ জনের মধ্যে তিনজন (২৯ শতাংশ) প্রাপ্তবয়স্ক সহিংসতার সম্ভাবনা থেকে নিজেকে এবং পরিবারকে রক্ষা করতে আগ্নেয়াস্ত্র কিনছেন।  

জরিপে অংশ নেয়া চারজনের মধ্যে তিনজনই বলছেন, তাদের কেনা আগ্নেয়াস্ত্রগুলো ‘কমন গান সেইফটি’র নিয়ম মেনে রাখা হয়নি। লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র অন্যান্য গোলাবারুদের সঙ্গে একই জায়গায় রাখা, আগ্নেয়াস্ত্র লোড করে রাখা বা লোডেড আগ্নেয়াস্ত্র আনলক করে রাখা আইনত দণ্ডনীয়। তবে এসব নিয়মের তোয়াক্কা করছেন না বেশির ভাগ নাগরিক। 

 


0 মন্তব্য

Do you like cookies? 🍪 We use cookies to ensure you get the best experience on our website. Learn more...