হলিউডে ধর্মঘটের পেছনে যেসব কারণ

টিবিএন ডেস্ক

জুলাই ১৬ ২০২৩, ১৮:১০

হলিউডের অভিনেতা ও লেখকরা ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন। ছবি: সংগৃহীত

হলিউডের অভিনেতা ও লেখকরা ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন। ছবি: সংগৃহীত

  • 0

অ্যামেরিকান ফেডারেশন অফ টেলিভিশন অ্যান্ড রেডিও আর্টিস্টসের (স্যাগ-অ্যাফট্রা) সঙ্গে গত সপ্তাহে চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয় স্টুডিওগুলো। এর পরই হলিউডের অভিনেতা ও লেখকরা শুক্রবার থেকে একযোগে আন্দোলনে যোগ দেবেন বলে ঘোষণা আসে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট রনাল্ড রিগ্যানের নেতৃত্বে ১৯৬০ সালের আন্দোলনের পর এই প্রথমব অভিনেতা ও লেখকদের দুই সংগঠনের একযোগে ধর্মঘট দেখছে হলিউড।

স্যাগ-অ্যাফট্রার ১৬০,০০০ সদস্য ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন। শুক্রবার রাত ১২টা থেকে তাদের এ ধর্মঘট শুরু হয়েছে। টম ক্রুজ, অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, জনি ডেপ, অ্যালিস্টারসহ অনেক বড় বড় তারকা এ সংগঠনের সদস্য। ম্যারিল স্ট্রিপ, বেন স্টিলার, কলিন ফারেলের মতো বড় তারকারা প্রকাশ্য ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন।

যে কারণে এ ধর্মঘট

ফিল্ম স্টুডিও এবং স্ট্রিমিং সেবাদানকারীদের সঙ্গে বেতন নিয়ে ঝামেলা এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স বা এআই ব্যবহারের প্রভাব নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটাতে ধর্মঘট ডাকা হয়েছে হলিউডে।

স্টুডিওগুলোর সঙ্গে দুটি সংগঠন বেতন ও এআই ব্যবহার করে কাজ করিয়ে নেয়ার প্রবণতা নিয়ে কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি।

সংগঠনগুলো পারিশ্রমিক বৃদ্ধি, চাকরির নিশ্চয়তার দাবিতে পথে নেমেছে। বিশেষ করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স (এআই) যাতে জায়গা দখল করতে না পারে সে ব্যাপারে তাদের নিশ্চয়তা দিতে হবে।

বড় তারকারা কি আন্দোলনে যোগ দেবেন?

বিনোদন শিল্পের আইনজীবী জোনাথন হ্যান্ডেল বলেন, ‘আন্দোলনে বড় তারকাদের দেখা যাবে। যদিও যাদের ইতোমধ্যে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার আয় রয়েছে তারা এ থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা পাবেন না।’

বড় তারকারা আর্থিক লাভের জন্য আন্দোলনে যোগ দেন না, কারণ তাদের এজেন্টরা আলাদা ভাবে স্টুডিওর সঙ্গে সব চুক্তি করেন; যা সংগঠনের সর্বনিম্ন বেতনের দাবি থেকে অনেক বেশি।

অভিনেতা ডমিনিক বার্গেস বলেন, ‘তারকাদের উপস্থিতি স্টুডিওগুলোকে একটি ন্যায্য চুক্তিতে আনতে সাহায্য করবে।’

সিনেমা ও টিভি শো এর উপর ধর্মঘটের প্রভাব

মে মাসের শুরু থেকে লেখকদের ধর্মঘট পর থেকে হলিউডের প্রযোজনা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।

দ্য লর্ড অফ দ্য রিংস: দ্য রিংস অফ পাওয়ারের মতো যেসব সিনেমা বা শো এর স্ক্রিপ্ট শেষ হয়েছে তারা কোনো লেখক ছাড়াই চিত্রগ্রহণ চালিয়ে যেতে পারছিল।

অ্যামেরিকার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো অভিনেতা ছাড়া কেবল কিছু সোপ অপেরা, রিয়্যালিটি শো ও গেইম শো চালিয়ে যেতে পারবে।

ফক্স এ সপ্তাহে ‘কিচেন নাইটমেয়ারস’ এবং লেগো মাস্টারের মতো আনস্ক্রিপটেড সিরিজের বিলম্বিত সময়সূচি প্রকাশ করেছে।

সিনেমার চিত্রগ্রহণ ও সিনেমা হলে প্রিমিয়ারের মধ্যে দীর্ঘ সময়ের পার্থক্য থাকায় সিনেমা মুক্তি পাওয়ায় তাৎক্ষণিক কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে ধর্মঘটের সময় বাড়লে সিনেমা মুক্তির ওপরে প্রভাব পরা শুরু হবে।

প্রধান হলিউড স্টুডিওগুলো ইতোমধ্যে তাদের সিনেমা মুক্তির তারিখ পরিবর্তন করেছে। যেমন কয়েকটি সুপারহিরো সিনেমার তারিখ পিছিয়ে দিয়েছে ডিজনি।

স্যাগ-অ্যাফট্রা ছোট এবং স্বাধীন চলচিত্রগুলোকে ছাড় দেয়া যেতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছে।

বিদেশি কার্যক্রমে প্রভাব

স্যাগ-অ্যাফট্রা একটি অ্যামেরিকান সংগঠন যার সদর দপ্তর লস অ্যাঞ্জেলসে।

হ্যান্ডেল বলেন, ‘স্যাগ-অ্যাফট্রার অভিনেতারা ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া অথবা যেখানেই সিনেমার শুটিংয়ের কাজ করছেন, তাদের কাজ বন্ধ করতে হবে।’

ধর্মঘটটি সদস্যদের টিভি এবং মোশন পিকচার প্রচার করতেও বাধা দিচ্ছে। এর মানে দাঁড়ায় সিনেমা মুক্তি কিংবা গুরুত্বপূর্ণ ফল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল যেমন, ভেনিস এবং টরন্টোর ফিল্ম ফেস্টিভালগুলো ধর্মঘট শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রভাবিত হবে৷

হ্যান্ডেল বলেন, ‘ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে যদি স্যাগ-অ্যাফট্রার অভিনেতাদের সঙ্গে একটি ছবি তোলা হয়, অভিনেতারা তা প্রচার করতে পারবেন না।’

কতদিন চলতে পারে ধর্মঘট?

ইতোমধ্যে লেখকরা ১১ সপ্তাহ ধরে আন্দোলন পরিচালনা করছেন। অতীতে হলিউডে ধর্মঘট তিন ঘণ্টা থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল।

স্যাগ-অ্যাফট্রার সভাপতি ফ্রান ড্রেসচার বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে স্টুডিওগুলোকে উল্লেখ করে বলেন, ‘এটা তাদের ব্যাপার। আমরা আজকে রাতেও তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য প্রস্তুত আছি। এটা তাদের উপর নির্ভর করে যদি তারা আমরা যা করি তাকে সম্মান দিয়ে স্বাভাবিক উপায়ে কথা বলতে ইচ্ছুক হয়।’

হ্যান্ডেল অন্তত তিন সপ্তাহ ধর্মঘট চলবে ধারণা করে বলেন, ‘এটি দীর্ঘ হতে চলেছে এবং সহজে সমাধান করা যাবে না। দুই পক্ষই একে অস্তিত্ব হিসেবে দেখছে। লেখক-স্টুডিও এবং অভিনেতা-স্টুডিওর মধ্যে অনেক তিক্ততা রয়েছে।’

অর্থনৈতিক প্রভাব

বিনোদন শিল্পের সঙ্গে অ্যাকাউন্টিং, ক্যাটারিং, পরিবহনসহ অগণিত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান জড়িত রয়েছে। ফলে আর্থিক প্রভাব হিসাব করে বের করা বেশ কঠিন হলেও নিশ্চিতভাবে সংখ্যাটি বিশাল অংকের।

হ্যান্ডেল বলেন, ‘লেখকরা ১৫ বছর আগে যখন ১০০ দিনের ধর্মঘটে ছিলেন তখন ক্ষতির পরিমাণ দুই বিলিয়ন ডলারের কিছুটা বেশি ছিল। সংখ্যাটি দিনে দাঁড়ায় ২০ মিলিয়ন ডলার। মুদ্রাস্ফীতির হিসাবে এখন কেবল ক্যালিফোর্নিয়াতেই দিনে ৩০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে।’


0 মন্তব্য

Do you like cookies? 🍪 We use cookies to ensure you get the best experience on our website. Learn more...