গেটস ফাউন্ডেশনের ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ৮ মে বৃহস্পতিবার সংস্থার কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন বিল গেটস। ২০৪৫ সাল নাগাদ নিজের মোট সম্পদের ৯৯ শতাংশ ওই দাতব্য সংস্থার মাধ্যমে দান করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। আগামী ২০ বছর গেটস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলার দান করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এ ধনকুবের।

ক্যালিফোর্নিয়ার ইন্ডিয়ান ওয়েলস-এ অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস বা এপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বৃহস্পতিবার তিনি এই ঘোষণা দেন।

নিজের ব্লগে বিল গেটস লিখেছেন, বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবন বাঁচাতে ও তাদের জীবনমানের আরো উন্নতি করতে তার প্রায় পুরো সম্পদই তিনি দান করে দেবেন। এরিমধ্যে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ ব্যয় করেছেন বিল গেটস।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিশ্বব্যাপী দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ নিশ্চিত করতে কাজ করছে গেটস ফাউন্ডেশন। বিশেষ করে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, প্রাণঘাতী রোগ সংক্রমণ রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে সংস্থাটি।

এ পর্যন্ত তাদের বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচির মাধ্যমে প্রায় ৮২ মিলিয়ন মানুষকে নানাভাবে সেবা দিয়েছে তারা। এছাড়া টিকাপ্রদান, চিকিৎসা সেবা দেয়া ও স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ নানাবিধ সেবা দিয়ে যাচ্ছে গেটস ফাউন্ডেশন। গ্যাভি ভ্যাকসিন অ্যালায়ান্স, গ্লোবাল ফান্ড টু ফাইট এইডসসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এইচআইভি, ম্যালারিয়ার মতো প্রাণঘাতী রোগের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সেবা দিয়ে যাচ্ছে গেটস ফাউন্ডেশন। বিল গেটসের দান করা অর্থ বিশ্বব্যাপী দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে দেয়া এসব সেবা কার্যক্রম আরো তরান্বিত করবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০২২ সালেই গেটস ফাউন্ডেশনের সমাপ্তির কথা বলেছিলেন বিল গেটস। এক সাক্ষাৎকারে তিনি ফাউন্ডেশনের অবসান দেখছেন বলে জানিয়েছিলেন। ৩ বছর পর ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতেই সংস্থাটির সমাপ্তির ঘোষণা দিলেন বিল গেটস। একইসঙ্গে নিজের অর্জিত সম্পদও দানের প্রতিশ্রুতি দিলেন তিনি। এক্ষেত্রে বিখ্যাত দানশীল অ্যান্ড্রু কার্নেগির কাছ থেকে উদ্দীপনা পাওয়ার কথাও জানান বিল গেটস।

তার ব্লগে লিখেছেন, যখন তিনি মারা যাবেন, লোকজন তাকে নিয়ে যেসব কথা বলবে, তার মধ্যে যেনো এটি না থাকে যে ‘বিল গেটস ধনী হিসেবে মারা গেছেন’। মানুষের জন্য এখনই জরুরিভাবে যেসব সমস্যার সমাধান দরকার, এ অর্থ সেসব মানুষের কল্যাণে ব্যয় করা যেতে পারে এমনটাই মনে করেন বরেণ্য এ প্রযুক্তিবিদ।

২০০০ সালে সাবেক স্ত্রী মেলিন্ডা গেটসকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্বের চরম দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নত জীবন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও তথ্য-প্রযুক্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে নিজেদের অর্জিত সম্পদ দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন।

এতে বিশ্বের অন্যতম বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেটও যুক্ত হন। স্বামী বিল গেটসের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করার সুবাদে ২০২৪ সালের মে মাসে ফাউন্ডেশন থেকে সরে যান মেলিন্ডা। এরপর এর নতুন নাম হয় গেটস ফাউন্ডেশন। এর একক চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন বিল গেটস।