ইরানের তেল রফতানিতে ‘নিষেধাজ্ঞার’ সম্ভাবনা নেই বাইডেন প্রশাসনের

টিবিএন ডেস্ক

এপ্রিল ১৬ ২০২৪, ১২:৪৭

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

  • 0

বিশ্ববাজারে তেলসহ অন্য জ্বালানির দাম বাড়ার উদ্বেগ, মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর যুদ্ধের আশঙ্কা ও ইরানের তেলের শীর্ষ ক্রেতা চায়না ক্ষুব্ধ হতে পারে এমন সম্ভাবনায় বাইডেন প্রশাসনের দেশটির তেল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞার দেয়ার মতো কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকেরা।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, দামেস্কে ইরান দূতাবাসে ১ এপ্রিলের ইযরায়েলি হামলার জবাবে দেশটির ওপর ইরান নজিরবিহীন ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালায়।

ইরানকে শাস্তি দেয়ার জন্য রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ বাইডেন প্রশাসনের জন্য একটি জটিল সমস্যা তৈরি করেছে।

আঞ্চলিক উত্তেজনা না বাড়িয়ে, তেলের দাম স্থিতিশীল রেখে বা ইরানের তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা চায়নার প্রতি বিরোধিতা না করে কীভাবে ভবিষ্যতে এই ধরনের হামলা ঠেকানো যায় এ বিষয়টি বাইডেন প্রশাসনের জন্য মুখ্য বিষয় হয়ে ওঠেছে।

ওয়াশিংটন কয়েক মাস ধরে বলেছে, গাজা যুদ্ধকে হামাস এবং ইযরায়েলের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধে পরিণত করা থেকে বিরত রাখা তার প্রাথমিক লক্ষ্যগুলোর একটি। তার অন্যতম লক্ষ্য ‘তেহরানকে’ পাশে রাখা।

ফক্স নিউজের সঙ্গে কথা বলার সময় রোববার হাউযের রিপাবলিকান প্রতিনিধি স্টিভ স্ক্যালাইজ বলেছেন, ‘প্রশাসন ইরানের জন্য তার তেল বিক্রি করা সহজ করে দিয়েছে যা সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অর্থায়নে ব্যবহার করা হচ্ছে।’

আরও পড়ুন: হামলার আগে ইযরায়েলকে সতর্ক করেছিল ইরান

হাউযের রিপাবলিকান নেতারা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ইরানের বিরুদ্ধে বিদ্যমান ব্যবস্থাগুলো কার্যকর করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য অভিযুক্ত করে বলেছেন, তারা চলতি সপ্তাহে নিষেধাজ্ঞাগুলোকে আরও তীব্র করার জন্য একটি বিল উত্থাপন করবেন।

মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু আঞ্চলিক বিশ্লেষক বলেছেন, তারা সন্দেহ করেন যে বাইডেন ইরানের অপরিশোধিত তেল রফতানি বন্ধ করার জন্য বিদ্যমান অ্যামেরিকান নিষেধাজ্ঞাগুলো কার্যকর করতে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেবেন।

ইরানের তেল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা গ্যাসোলিনের দামের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব রাখার কারণে বাইডেন ইরানের তেল রফতানি রোধে দৃঢ়ভাবে পদক্ষেপ নাও নিতে পারেন বলে অনুমান বিশ্লেষকদের।

সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা এবং বর্তমানে র‌্যাপিডান এনার্জি গ্রুপের সিইও স্কট মোডেল বলেন, ‘যদি রিপাবলিকানদের এই বিলগুলো পাসও হয়, তবু বাইডেন প্রশাসনকে কার্যকর করতে দেখা কঠিন।

‘পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করা বা বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রয়োগ করা বা নতুনগুলোকে কোনও অর্থবহ উপায়ে (ইরানের তেল রফতানি) কমানো বা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করাও কঠিন।’

অ্যাটলান্টিক কাউন্সিলের নিষেধাজ্ঞা এবং অর্থ পাচার বিরোধী বিশেষজ্ঞ কিম্বার্লি ডোনোভান জানান, তেল ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনার কারণে গত কয়েক বছরে তেল-সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞাগুলো কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয়নি।

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি যে, সপ্তাহান্তে ইযরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার প্রতিক্রিয়ায় প্রশাসন কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করবে না। কারণ এমনটা করলে তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে।

‘একটি নির্বাচনি বছরে তেলের মূল্য এবং শেষ পর্যন্ত পাম্পে গ্যাসের মূল্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।’

স্টেইট ডিপার্টমেন্টের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘বাইডেন প্রশাসন ইরানের ওপর থেকে কোন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়নি এবং ইসলামিক প্রজাতন্ত্রটির ওপর চাপ বাড়াচ্ছে।’

তিনি বলেছেন, ‘ইরানের ওপর আমাদের নিষেধাজ্ঞাগুলো বহাল রয়েছে এবং আমরা সেগুলো প্রয়োগ করতে থাকব।’

বেশ কয়েকজন বিশ্লেষক পরামর্শ দিয়েছেন, ওয়াশিংটন ইরানের হামলায় ইযরায়েলি প্রতিক্রিয়া রোধ করার জন্য ইরানের তেল রফতানি কমাতে কিছু পদক্ষেপ নিলে এটি মধ্যপ্রাচ্যে সংঘর্ষকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।

ইরান তার সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে বৃহত্তর সংঘর্ষ ছড়িয়ে দিতে পারে।

এ ছাড়া আক্রমণাত্মকভাবে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করলে চায়নার সঙ্গে সম্পর্ককেও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে, যা সম্প্রতি মেরামতের চেষ্টা করছে বাইডেন প্রশাসন।

‘যদি আপনি সত্যিই ইরানের তেল রপ্তানি বন্ধ করতে চান, তাহলে আপনাকে চায়নার বিরুদ্ধে অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে’, সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র এমনটাই বলেছে।

সূত্র আরও বলে, ‘আপনি কি সত্যিই বন্ধ করতে যাচ্ছেন? আপনি কি এমন কিছু করতে যাচ্ছেন যা প্রশাসন করেনি এমনকি ট্রাম্প প্রশাসনও করেনি।’

সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক জন অল্টারম্যান বলেছেন, ‘নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে ওয়াশিংটন কী করতে পারে তার সীমাবদ্ধতা রয়েছে এবং যারা এটি চায় না তারা ফাঁক খুঁজে বের করতে পারদর্শী।’

তিনি বলেন, ‘আমি ইরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার (আরোপ) দিকে একটি ইঙ্গিত দেখার আশা করি। আমি আশা করি না যে হোয়াইট হাউযের বর্তমান প্রশাসন বা ভবিষ্যতের কোন প্রশাসন ইরানের তেলের রফতানি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে সক্ষম হবে।’


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন