শ্রীলঙ্কার কাচাথিভু দ্বীপ নিয়ে ভারতে নির্বাচনের আগে বিতর্ক

টিবিএন ডেস্ক

এপ্রিল ২ ২০২৪, ১৬:৪৯

কাচাথিভু দ্বীপের একমাত্র গির্জায় বছরে একবার ভক্তরা সমাবেত হন। ছবি: সংগৃহীত

কাচাথিভু দ্বীপের একমাত্র গির্জায় বছরে একবার ভক্তরা সমাবেত হন। ছবি: সংগৃহীত

  • 0

ভারতের পার্লামেন্ট নির্বাচনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে শ্রীলঙ্কার প্রায় জনবসতিহীন ছোট কাচাথিভু নামের দ্বীপটি রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জন্ম দিয়েছে।

বিবিসি জানায়, শ্রীলঙ্কার পক প্রণালিতে অবস্থিত প্রায় ০.৭ বর্গ মাইল বিস্তৃত দ্বীপটি ভারত এবং শ্রীলঙ্কাকে বিভক্ত করেছে।

এটি ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের রামেশ্বরম শহর থেকে উত্তর-পূর্বে এবং শ্রীলঙ্কার জাফনা শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত।

দ্বীপটিতে খাবার পানির কোন উৎস নেই এবং এটির একমাত্র কাঠামো হল একটি গির্জা যেখানে বার্ষিক তিন দিনের উৎসব হয় যাতে ভারত ও শ্রীলঙ্কা উভয় দেশের ভক্তরা এসে থাকেন।

ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির নেতৃত্বাধীন সরকার ১৯৭৪ সালে দ্বীপটির ওপর দাবি পরিত্যাগ করে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এর ফলে, উভয় দেশের মানুষ একে অপরের জলে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকেন এবং প্রতিবেশি দুই দেশের বিরোধের মীমাংসা করে।

কিন্তু রোববার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সংবাদমাধ্যম টাইমস অফ ইন্ডিয়া থেকে একটি নিবন্ধ তার এক্স শেয়ার করলে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়।

মোদি এক্স বার্তায় লিখেন, ‘চোখ খোল ও চমকে দেয়ার মতো তথ্য! কীভাবে কংগ্রেস নির্মমভাবে কাচাথিভুকে ছেড়ে দিয়েছে।’

কংগ্রেস অবশ্য এর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, মোদি ’হতাশার’ কারণে নির্বাচনের আগে বিষয়টি উত্থাপন করেছেন বলে অভিযোগ করেছে।

তামিলনাড়ুতে বিজেপির প্রধান কে আন্নামালাই কিছু পুরোনে নথি থেকে এ বিষয়ে তথ্য উন্মোচন করেন।

যেখানে নথিগুলো কংগ্রেসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে উদ্ধৃত করে বলেছে, তিনি কাচাথিভুকে কোন গুরুত্ব দেননি এবং তিনি ভারতের দাবি ছেড়ে দিতে কোন দ্বিধা করবেন না।

কিন্তু ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তা এবং অন্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাচাথিভুর ওপর দাবি করার জন্য ভারতের একটি ভাল আইনি মামলা ছিল কারণ ১৮৭৫ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত এই দ্বীপটি একজন ভারতীয় রাজা নিরবচ্ছিন্নভাবে শাসন করেছেন।

মোদির এক্স পোস্টের পর থেকে অনেক বিজেপি নেতা এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কংগ্রেসের সমালোচনা করতে তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন।

তারা আরও বলছেন, বর্তমানে তামিলনাড়ুর শাসক দল দ্রাবিড় মুন্নেত্র কারাগম (ডিএমকে) যারা ১৯৭৪ সালেও ক্ষমতায়ও ছিল, তারা কাচাথিভুকে ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট কাজ করেনি।

ডিএমকে অবশ্য এটি অস্বীকার করে জানিয়েছে, তারা চুক্তিটি সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত দ্বীপের ওপর দাবি পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবগত ছিল না।

ডিএমকে মুখপাত্র সারাভানান আন্নাদুরাই বলেছেন, ‘ডিএমকে গত কয়েক দশক ধরে এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বেশ কয়েকটি চিঠি লিখেছে এবং কাচাথিভুতে তামিলনাড়ুর জেলেদের অধিকার সমুন্নত রেখেছিল।

‘বিজেপি এখনই এই ইস্যুতে জেগেছে, যখন নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে।’

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এক প্রেস কনফারেন্সে এ বিষয়ে বলেছেন, ‘বিষয়টি জনসাধারণের দৃষ্টি থেকে অনেক দিন লুকানো ছিল।’

ভারত শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ১৯৭৪ সালের চুক্তি পুনর্বিবেচনার পরিকল্পনা করেছে কিনা জানতে চাইলে জয়শঙ্কর জানান যে বিষয়টি আদালতে রয়েছে।

২০১৩ সালে ভারতের ফেডারেল সরকার সুপ্রিম কোর্টকে বলেছিল যে, শ্রীলঙ্কা থেকে কাচাথিভুকে ‘পুনরুদ্ধার’ না করার কারণ ‘ভারতের অন্তর্গত কোন অঞ্চল হস্তান্তর করা হয়নি বা সার্বভৌমত্ব পরিত্যাগ করা হয়নি যেহেতু এলাকাটি বিতর্কিত ছিল এবং কখনও সীমাবদ্ধ করা হয়নি।’

পরের বছর মোদি সরকারের প্রতিনিধিত্ব করা অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহাতগি আদালতকে বলেন, ‘ভারত যদি কাচাথিভু চায় তবে এটি করতে হবে। এটা পেতে যুদ্ধে যেতে হলেও।’

এ বিষয়ে বিবিসি মন্তব্যের জন্য ভারতে শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনকে ইমেল করেছে এবং উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছে।

শ্রীলঙ্কার মন্ত্রী জীবন থন্ডামান ভারতের দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, কাচাথিভুর নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে ভারত দেশটির সঙ্গে ‘সরকারি’ পর্যায়ে যোগাযোগ করেনি।

তিনি বলেন, ‘আমরা যতটুকু জানি কাচাথিভু দ্বীপটি শ্রীলঙ্কার নিয়ন্ত্রণ রেখার মধ্যে পড়েছে।’

৫০ বছর আগের এ ইস্যুটিকে আবার সামনে আনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিজেপি বিরোধী নেতারা বলছেন, তামিলনাড়ুতে ১৯ এপ্রিল সাধারণ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ভোটের আগে বিজেপি একটি সংবেদনশীল ইস্যুকে ভোট পাওয়ার জন্য বিতর্কে পরিণত করার চেষ্টা করছে।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন




Do you like cookies? 🍪 We use cookies to ensure you get the best experience on our website. Learn more...