কোহেন বলেছেন, তিনি তার বসকে রক্ষা করার জন্য এবং আনুগত্য প্রদর্শনের জন্য ড্যানিয়েলসকে অর্থ দেয়ার জন্য দায়ী একমাত্র ব্যক্তি বলে নিজেকে তুলে ধরেছিলেন। বাস্তবে, তিনি জুরিদের বলেন, তিনি যা কিছু করেছেন তা ট্রাম্পের নির্দেশে হয়েছে।

প্রসিকিউটররা অভিযোগ করেছেন, ট্রাম্প একটি রিটেইনার চুক্তি অনুসারে আইনি পরিষেবা হিসেবে লিপিবদ্ধ করে এই অর্থ দেয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যবসায়িক রেকর্ডগুলো জালিয়াতি করেছিলেন। কোহেন সোমবার নিউ ইয়র্ক সিটিতে সাক্ষ্য দিয়েছেন যে এ জাতীয় কোন রিটেইনার চুক্তির অস্তিত্ব নেই।

ট্রাম্পের আইনজীবী টড ব্লাঞ্চে বিকেলে বেশ কড়াভাবে তার জেরা শুরু করেন। তিনি কোহেনকে বলেছেন, তাদের কখনও দেখা হয়নি। তাহলে কোহেন কেন তাকে টিকটকে ‘ছিঁচকাঁদুনে’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

জবাবে কোহেন বলেন, ‘আমি এমন কিছু বলেছি, হতে পারে।’

ট্রাম্পকে ‘বেকুব ডিক্টেটর’ বলেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবেও কোহেন একই ধরনের উত্তর দেন।

গত বছর টেলিভিশনে কাজ করা বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দেয়ার কথা মনে আছে কিনা জানতে চাইলে কোহেন বলেছেন, তিনি তা করেননি। কোহেন বলেন, ‘আমি কখনও টেলিভিশনে যেতে চাইনি বলে মনে পড়েনা।’

তবে তার মনে আছে যে ডিসট্রিক্ট অ্যাটর্নি তাকে কিছুটা সময় কথা বলা বন্ধ রাখতে বলেছিলেন।

ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত দেখতে চান কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কোহেন বলেন, ‘অবশ্যই।’

প্রসিকিউটর জোশুয়া স্টেইনগ্লাস দিনের শুরুতে জাজদের বলেছেন, কোহেন ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অ্যালভিন ব্র্যাগের মামলার শেষ সাক্ষী।

এরপর ব্লাঞ্চে জাজকে বলেছেন, আসামিপক্ষ ট্রাম্পসহ কোন সাক্ষীকে ডাকবে কিনা তা স্পষ্ট নয়।

কোহেন মঙ্গলবার সাক্ষ্য দিয়েছেন যে ট্রাম্প তাকে ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের তৎকালীন চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার অ্যালেন উইসেলবার্গের সঙ্গে কীভাবে টাকা দেয়া হবে তা নিয়ে কাজ করতে বলেছিলেন।

তিনি বলেছেন, ২০১৭ সালে ওভাল অফিসে কোহেনের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় ট্রাম্প এই অবস্থানের পুনরাবৃত্তি করেন।

ট্রাম্প কোহেনকে বলেন, ‘অ্যালেনের সঙ্গে আপনার চুক্তি নিশ্চিত করুন।’

কোহেন বলেন, ট্রাম্পের কাছ থেকে মাসিক ৩৫ হাজার ডলারের চেক পাওয়ার পরপর তিনি আইনি সেবার জন্য চালান পাঠান।

প্রসিকিউটর সুসান হফিঙ্গার জানতে চান, তিনি কোন আইনি সেবা দিয়েছেন কিনা। জবাবে কোহেন বলেন, ‘না।’

হফিঙ্গার জানতে চান, ‘এই চালানটি কি একটি মিথ্যা রেকর্ড ছিল?’ জবাবে কোহেন বলেন, ‘হ্যাঁ ম্যাম।’

কোহেন বলেন, তিনি ২০১৭ সালে ট্রাম্পের জন্য কিছু ছোটখাটো আইনী কাজ করেছিলেন। দ্য অ্যাপ্রেনটিসের প্রতিযোগী সামার জার্ভোসের করা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা রক্ষার জন্য অ্যাটর্নিকে সহায়তা করেছিলেন এবং মাদাম তুঁসোকে ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের মোমের ভাস্কর্য তৈরিতে অনুমতি দেয়ার একটি চুক্তি পর্যালোচনা করেছিলেন।

কোহেনের হিসেব অনুযায়ী, পুরো বছর ধরে তিনি ১০ ঘণ্টারও কম সময় আইনি কাজ করেছেন।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ড্যানিয়েলসকে হাশ মানি দেয়ার কথা জানানোর পর ২০১৮ সালে তিনি ট্রাম্পের জন্য আরও কাজ করেছেন বলে জানান।

তিনি আরও বলেছেন, তিনি ট্রাম্পকে প্রকাশ্যে কী বলবেন তা জানিয়েছিলেন। সেটা হলো ‘ট্রাম্প অর্থ পরিশোধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না’। কোহেন বলেছেন, ট্রাম্প তাকে বলেছেন, এটা ‘ভালো’।

কেন মিথ্যা বলেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে কোহেন বলেন, ‘ট্রাম্পকে রক্ষার জন্য।’

ফেডারেল ইলেকশন কমিশন কোহেনকে অর্থ দেয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি একটি বিবৃতি জারি করে বলেন, ‘আমি ড্যানিয়েলসকে ১৩০ হাজার ডলার দেয়ার সুবিধার্থে আমার ব্যক্তিগত তহবিল ব্যবহার করেছি। ট্রাম্প অর্গানাইজেশন বা ট্রাম্পের প্রচারণা শিবির কেউই এই লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ছিল না এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অর্থ দেয়ার জন্য আমাকে কেউ অর্থ দেয়নি।’

কোহেন বলেছেন, ট্রাম্প নির্ধারিত সময়ের আগেই বিবৃতিটি অনুমোদন করেন এবং আরও বলেন, ‘এটি একইসঙ্গে সত্য এবং বিভ্রান্তিকর। এটা ট্রাম্প অর্গানাইজেশন বা ট্রাম্পের প্রচারণা শিবির ছিল না। তিনি ছিলেন স্বয়ং ডনাল্ড জে ট্রাম্প।’

কোহেন বলেছেন, তিনি ট্রাম্পের কাছ থেকে অর্থ না পেলেও তৎকালীন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার সম্পর্ক সুসংহত করেছেন, পরামর্শ ও আইনি কাজ থেকে চার মিলিয়ন ডলার আয় করেছেন।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালের এপ্রিলে তার ভাগ্য পরিবর্তন হতে শুরু করে। তখন এফবিআই তার সেল ফোন, ট্যাক্স রেকর্ড এবং অন্যান্য নথি নিয়ে তার বাড়ি ও আইন অফিসে তল্লাশি পরোয়ানা কার্যকর করে। তখন তিনি অনুভব করেছেন, তার জীবন ওলটপালট হয়ে গেছে এবং তিনি উদ্বিগ্ন, হতাশ এবং রাগান্বিত বোধ করেন।

কোহেন বলেন, তখন তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি তাকে বলেন, ‘চিন্তা করবেন না। আমি অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট। কোন সমস্যা নেই। সব ঠিক হয়ে যাবে। শক্ত থাকুন। সব ঠিক হয়ে যাবে।’

কোহেন বলেন, এরপর তিনি আশ্বস্ত বোধ করেছেন। সেবারই সবশেষ ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, রুডি জুলিয়ানির প্রতিনিধিত্বকারী নিউ ইয়র্কের আইনজীবী রবার্ট কস্টেলোর সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়েছিল।

কোহেন যোগ করেন যে, কস্টেলো তাকে তার আইনজীবী হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। তবে কোহেন উদ্বিগ্ন ছিলেন যে কস্টেলো কেবল জুলিয়ানি ও ট্রাম্পের কাছে তথ্য জানাবেন।

তিনি আরও বলেছেন, ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ান হস্তক্ষেপ নিয়ে তৎকালীন স্পেশাল কাউন্সেল রবার্ট মুলারের তদন্তে সহযোগিতা না করার জন্য কস্টেলোর চাপ অনুভব করছিলেন তিনি।

কোহেন বলেন, তিনি শেষ পর্যন্ত তার পরিবারের অনুরোধে ড্যানিয়েলসকে অর্থ দেয়াসহ অন্যান্য অভিযোগগুলোতে সহযোগিতা ও দোষ স্বীকার করার সিদ্ধান্ত নেন।

শেষ পর্যন্ত তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ফলে তাকে বরখাস্ত করা হয়। তিনি বলেছেন, তিনি মূলত পডকাস্ট এবং ট্রাম্প-সম্পর্কিত দুটি বই লিখে নিজেকে সমর্থন করছেন।