স্যাংশনের ভয়ে থাকব না, নিজেদের শক্তিতে চলব: শেখ হাসিনা

টিবিএন ডেস্ক

মে ১৫ ২০২৩, ১৭:০০

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

  • 0

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা স্যাংশন দেবে বাংলাদেশ তাদের কাছ থেকে কিছু কিনবে না। প্রয়োজনে দেশের মানুষ এক বেলা না খেয়ে থাকবে, তবু কোনো চাপের মুখে নতি স্বীকার করবে না। বাংলাদেশ নিজের শক্তিতে চলবে।

সাম্প্রতিক জাপান, অ্যামেরিকা ও বৃটেইন সফর সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমকে অবহিত করতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা সাফ জানান শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সোমবার বিকেল ৪টায় এ সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা আমাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবে, আমরা তাদের কাছ থেকে কিছু কেনাকাটা করব না। ভয়ের কিছু নেই, অনাবাদী জমি সব চাষ করে, যা আসে…। বিশ্বব্যাপী খাদ্যের অভাব। উন্নয়নশীল নয়, উন্নত দেশেও খাদ্যের সমস্যা। একটার বেশি টমেটো কেনা যাবে না, ছয়টার বেশি ডিম কেনা যাবে না।’ 

তিনি বলেন, ‘রোজায় তো কোনো হাহাকার শোনা যায়নি। কেউ কি আসছে, আপনাদের কাছে কেউ ভিক্ষা চাইতে? আসেনি। সবাই ইফতারের জন্য এগিয়ে এসেছে। আমাদের দল ও নেতাকর্মীদের এ জন্য ধন্যবাদ জানাই।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কথা নাই বার্তা নাই, আমাদের নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখাবে, আমরা ভয় নিয়ে বসে থাকব। কেন? আমাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ, আমাদের দেশের মানুষই নিজের দেশের বিরুদ্ধে বদনাম করে।’

রিজার্ভের পতন নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘২০০৬ সালে যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল তখন রিজার্ভ ছিল শূন্য দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার, এখন ৩১ বিলিয়ন ডলার আছে। দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমাদের সব জমি আবাদ করব, আমরা অন্যের উপর নির্ভর করব না। আমরা নিজেদেরটা দিয়ে নিজেরা চলব।’

বাংলাদেশের জাতীয় নদী কমিশন ‘নদীখেকো’দের তালিকা প্রকাশ করেছে। আগামী নির্বাচনে ‘নদীখেকো’রা অংশ নিতে পারবেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নদীখেকোদের কথা বলতে হলে স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান ও এরশাদের কথা বলতে হবে। তারাই কিন্তু নদীগুলো দখলের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের সময়ে অনেকগুলো পুকুর, খাল আমরা উদ্ধার করে দিয়েছি। 

‘আমরা ১৯৯৬ সালে দখলমুক্ত করে রেখে গিয়েছি তা পরে বিএনপি সরকারের সময় দখলে চলে গেছে। আমরা সবসময় পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছি। আইয়ুব খান আসার পর মতিঝিলের বিশাল বিল বন্ধ করে দেয়া হয়। জায়গাটা মতিঝিল, কিন্তু ঝিলের কোনো অস্তিত্ব নেই। হাতিরঝিল কেউ কেউ পৈতৃক সম্পত্তি বলে দখল করে নিতে চেয়েছিল। কেউ কেউ দলিলও বের করে নিয়ে এসেছিল। কিন্তু আমি বলেছিলাম, না এটা দখলমুক্ত করতে হবে। পরে সুসজ্জিত করে দিয়েছি।’

নদী দখলকারীদের নির্বাচনের বাইরে রাখতে সাংবাদিকদের কাছে তালিকা চান শেখ হাসিনা। 

ঘূর্ণিঝড় মোকার আঘাতে বাংলাদেশের যেসব এলাকায় বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলোর মেরামত কাজ শুরু হয়ে গেছে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা বলেন, ‘অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোকার আঘাতে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি থেকে আমরা রক্ষা পেয়েছি, যদিও আমাদের সেন্ট মার্টিন ও কক্সবাজারে কিছু ক্ষতি হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবাইকে আমরা যথাযথ সময়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আনতে পেরেছি। উপকূলের কয়েকটি জেলায় ৭ হাজার ৪০টি আশ্রয়কেন্দ্র আমরা প্রস্তুত করে রেখেছিলাম। সেখানে প্রায় সাড়ে সাত লাখের বেশি মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হয়। আর যেসব এলাকা ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, দ্রুতই সেগুলো আবার মেরামতের কাজ শুরু হয়ে গেছে। তা ছাড়া খাবার, পানি যা যা দরকার, সবকিছুর ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

শেখ হাসিনা ত্রিদেশীয় সফরের অংশ হিসেবে গত ২৫ এপ্রিল টোকিওর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। জাপানি প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিসিদার আমন্ত্রণে তিনি জাপান সফরে যান। 

টোকিওতে অবস্থানের সময় শেখ হাসিনা কৃষি, মেট্রোরেল, শিল্প-উন্নয়ন, জাহাজ-রিসাইক্লিং, কাস্টমস বিষয়, মেধা সম্পদ, প্রতিরক্ষা, আইসিটি ও সাইবার নিরাপত্তা ইত্যাদি খাতে সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে আটটি চুক্তি সই প্রত্যক্ষ করেন। 

শেখ হাসিনা জাপানের সম্রাট নারুহিতোর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং তার জাপানি প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। 

প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ২৭ এপ্রিল চার জাপানি নাগরিকের কাছে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ হস্তান্তরের পাশাপাশি একটি বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন এবং কমিউনিটি সংবর্ধনায় যোগ দেন। 

তিনি জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োশিমাসা হায়াশির পাশাপাশি জাইকা, জেইটিআরও, জেইবিআইসি, জেবিপিএফএল ও জেবিসিসিসিইসির নেতাদের সঙ্গে বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেন। 

এরপর শেখ হাসিনা ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংকঅংশীদারত্বের ৫০ বছর উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তিনি অ্যামেরিকান ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে একটি গোলটেবিল বৈঠক এবং বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রেসিডেন্ট অজয় বঙ্গ ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিভারের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন। এ ছাড়া তিনি একটি নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেন। 

সফরের তৃতীয় ধাপে শেখ হাসিনা ওয়াশিংটন ডিসি থেকে বৃটেইন ও অন্য কমনওয়েলথ স্টেইটের রাজা ও রানি হিসেবে চার্লস তৃতীয় এবং তার স্ত্রী ক্যামিলার রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেন। 

লন্ডনে শেখ হাসিনা রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে মতবিনিময় এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের সঙ্গে আলোচনা করেন। 

বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লিভারলি এবং তার স্ত্রী সুসানা স্পার্কস তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

শেখ হাসিনা সেখানে ভুটানের রাজা জিগমে খেসারনামগেল ওয়াংচুক এবং রানি জেসুনপেমার সঙ্গে বৈঠক করেন।

তিন দেশ সফর শেষে ৯ মে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা।


0 মন্তব্য

Do you like cookies? 🍪 We use cookies to ensure you get the best experience on our website. Learn more...