ঋণখেলাপির প্রভাব পড়বে যেসব স্টেইটে

মেহরিন জাহান, টিবিএন ডেস্ক

মে ২২ ২০২৩, ২১:৫৪

ঋণখেলাপির পথে অ্যামেরিকা। প্রতীকী ছবি

ঋণখেলাপির পথে অ্যামেরিকা। প্রতীকী ছবি

  • 0

অ্যামেরিকাকে ঋণখেলাপি হওয়া থেকে বাঁচাতে বাইডেন প্রশাসনের হাতে সময় আছে দুই সপ্তাহেরও কম। এর মধ্যে ঋণসীমা বাড়ানোর বিষয়ে রিপাবলিকানদের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চুক্তিতে পৌঁছাতে হবে। এ নিয়ে রিপাবলিকান ও ডেমোক্যাটিক সেনেটরদের মধ্যে এরইমধ্যে কিছু আলোচনা হলেও কোনোটিই ফলপ্রসূ হয়নি। ফলে ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকি এখনও তুঙ্গে।

হাউয স্পিকার রিপাবলিকান কেভিন ম্যাকার্থির সঙ্গে সোমবার এ বিষয়ে সরাসরি আলোচনায় বসার কথা রয়েছে প্রেসিডেন্টের। জাপানে জি-সেভেন সামিট শেষ করে রোববার দেশে ফিরে আসা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে বলে জানান ম্যাকার্থি।

তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আমার মনে হচ্ছে, উনি যদি বুঝতে পারেন আমরা কী চাইছি, তাহলে সংকটের কিছু সমাধান পাব… এখনও কিন্তু কোনো চুক্তি হয়নি, এখনও আমাদের মতভেদ আছে।’  

ট্রেযারি সেক্রেটারি জ্যানেট ইয়েলেন জানিয়েছেন, ৩১.৪ ট্রিলিয়ন ঋণ রয়েছে সরকারের। সেটি শোধ করার সময়সীমা শেষ হবে ১ জুন। 

ঋণ সময়মতো শোধ না হলে এর ভয়াবহ প্রভাব পড়বে সরকারি খাত থেকে অনুদান নিয়ে চলা প্রতিটি সংস্থা বা কার্যক্রম এমনকি ফেডারেল কর্মচারীদের বেতন-ভাতার ওপরও।

মুডিস অ্যানালিটিক্সের অর্থনীতিবিদেরা বলেছেন, ‘ঋণসীমার লঙ্ঘন হলে বেশিরভাগ স্টেইটের অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা লাগবে।’

সংস্থাটি সম্প্রতি দেশের অর্থনীতিতে ঋণখেলাপির প্রভাব নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

তাতে বলা হয়েছে, ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রতি চারটি চাকরির একটি ফেডারেল সরকার সংশ্লিষ্ট। তাই এই স্টেইটে সবচেয়ে বড় ধাক্কা লাগবে। একইভাবে বিভিন্ন স্টেইটের যেসব কাউন্টিতে বেশিরভাগ লোক সরকারি বিভিন্ন সংস্থায় যুক্ত, সেখানেও ধাক্কা লাগবে। কারণ এই কর্মীদের বেতন বন্ধ বা অনিয়মিত হয়ে যেতে পারে। 

এরপর বিপর্যয়ে পড়বে সেসব স্টেইট, যেখানে ন্যাশনাল পরীক্ষাগার বা মিলিটারি বেইযের মতো বড় সব ফেডারেল ফ্যাসিলিটি আছে। যেমন, ইউনাইটেড স্টেইটস প্যাসিফিক কমান্ড কার্যালয় ও ইলেভেন মিলিটারি বেইয আছে আছে হাওয়াইয়ে; অ্যালাস্কায় আছে বিশাল সব ফেডারেল মালিকানার জমি; লস অ্যালমস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি আছে নিউ মেক্সিকোয়। 

প্রতিবেদনে অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম ক্যামিনস ও বার্নার্ড ইয়ারোস লিখেছেন, ‘পাবলিক সেক্টরকে সাধারণত স্থিতিশীল একটি ফোর্স হিসেবে ধরা হয়। তবে ঋণসীমার লঙ্ঘন এই সেক্টরের অর্থনৈতিক পতনকে সুপারচার্জ করবে।’

প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে আছে ফেডালের অনুদানের উপর খুব বেশি নির্ভরশীল অঞ্চলগুলো। 

বলা হয়েছে, ‘ক্যাপিটল বেল্টওয়ে ও এর আশেপাশের বিশেষ করে নর্দান ভার্জিনিয়ার প্রফেশনাল সার্ভিসেস ফার্মগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হোয়াইট কলার সাপোর্ট ফার্ম রয়েছে এর মধ্যে… এছাড়া কানেকটিকাট, ক্যানসাস ও ওয়াশিংটনের অ্যারোস্পেসে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’   

মুডিস অ্যানালিটিক্স বলছে, ঋণ শোধের নির্ধারিত দিন পেরিয়ে যাওয়ার এক সপ্তাহ পরও কংগ্রেস ঋণসীমা বাড়াতে পারবে। সেক্ষেত্রে এক সপ্তাহের জন্য হলেও অ্যামেরিকাকে ঋণখেলাপি হতে হবে। এই স্বল্প ঋণখেলাপ কালও দেশের অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা অর্থনীতিবিদদের।

তারা বলছেন, এই এক সপ্তাহে ১.৫ মিলিয়ন মানুষ চাকরি হারাতে পারেন। এতে বেকারত্বের হার ৩.৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫ শতাংশে দাঁড়াবে; জিডিপি সংকুচিত হবে ০.৭ শতাংশ। 

এতসব ঝুঁকি থাকলেও মুডিসের বিশ্লেষকরা আশা করছেন, দেশে এতবড় বিপর্যয় আসবে না। ঋণসীমার লঙ্ঘন হলেও তা দ্রুত সামলে নেয়া যাবে। 

রিপোর্ট অনুযায়ী, ‘তারপরও একটি দীর্ঘ অর্থনৈতিক স্থবিরতার সম্ভাব্যতা একেবারেই নেই বলা যাবে না। এক সময় যা অকল্পনীয় ছিল, এখন তা বাস্তব হুমকি।’


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন