জলজ স্তন্যপায়ীদের ডাঙ্গায় ফেরার সম্ভাবনা নেই

টিবিএন ডেস্ক

জুলাই ১৮ ২০২৩, ৫:০১

জলজ স্তন্যপায়ী ডলফিনের দল। ছবি: সংগৃহীত

জলজ স্তন্যপায়ী ডলফিনের দল। ছবি: সংগৃহীত

  • 0

অরকা, ডলফিন ও তিমির মতো জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের পুনরায় ডাঙ্গায় বসবাসের সম্ভাবনা প্রায় নেই এমন তথ্য উঠে এসেছে নতুন এক গবেষণায়। গবেষকরা দেখেছেন যে, খাপ খাইয়ে নেয়ার যে ক্ষমতা প্রাণীগুলোকে পানিতে বাস করার উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলেছে তা একটি বিবর্তনীয় সীমা অতিক্রম করেছে।

এর ফলে, প্রাণীগুলো আর ডাঙ্গায় ফিরে আসবে না বলেই প্রমাণিত হয়।

৩৫০ মিলিয়ন থেকে ৪০০ মিলিয়ন বছর আগে প্রথম মাছ পানি থেকে বেরিয়ে ডাঙ্গায় উঠে পড়ে। মেরুদণ্ডী প্রাণীর তখনকার অঙ্গগুলো দিয়ে তারা তাদের চারপাশে ঘোরাঘুরি করতে থাকে ও পরবর্তীতে আজকের যে চতুষ্পদ প্রাণীর প্রজন্মগুলো আমরা দেখতে পাই, তেমন টেট্রাপড প্রজাতিতে পরিণত হয়।

টেট্রাপডস হলো সে সকল মেরুদণ্ডী প্রাণী যার চারটি হাত-পা রয়েছে। এই গ্রুপের মধ্যে রয়েছে উভচর, সরীসৃপ ও স্তন্যপায়ী প্রাণী। যদিও বেশিরভাগ স্তন্যপায়ী প্রাণী ডাঙ্গায় রয়ে গেছে তবে কিছু (প্রায় ২৫০ মিলিয়ন বছর আগে) পানিতে ফিরে যায়। অভিযোজিত হয়ে তারা পানির নিচের আবাসস্থলগুলোর সুবিধা নেয়।

ডাঙ্গায় অভিযোজিত তারা কেবল একবারই হয়েছিল। কিন্তু পানিতে ফিরে আসার ঘটনা বারবার ঘটেছে। গবেষকরা প্রশ্ন তুলেছেন জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণীরা ডাঙ্গার জীবনের সঙ্গে পুনরায় মানিয়ে নিতে পারবে কিনা? এবং যদি সেটা না হয় তবে কেন হবে না?

প্রসিডিংস অব দ্য রয়্যাল সোসাইটি-বি জার্নালে গত ১২ জুলাই প্রকাশিত নতুন গবেষণায় গবেষকরা ৫ হাজার ৬০০ টিরও বেশি স্তন্যপায়ী প্রজাতির ওপর গবেষণা করেন। তারা দেখতে পেয়েছেন যে ভূমি থেকে জলে স্থানান্তর ‘অপরিবর্তনীয়’।

বিবর্তন যে বিপরীতমুখী নয় এই ধারণাটি প্রথম বেলজিয়ামের জীবাশ্মবিজ্ঞানী লুই ডোলো ১৯ শতকে উত্থাপন করেন। ডোলোজ ল নামে পরিচিত এই নীতিতে বলা হয়েছে, একবার সময়ের সঙ্গে একটি গোত্রের কোন জটিল বৈশিষ্ট্য হারিয়ে গেলে পরবর্তী প্রজন্মগুলিতে এটি পুনরায় ফিরে আসার সম্ভাবনা কম।

স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে এই ধারণাটি পরীক্ষা করার জন্য, গবেষকরা হাজার হাজার প্রজাতিকে চারটি বিভাগে বিভক্ত করেছেন। চারটি বিভাগ হচ্ছে, সম্পূর্ণ স্থলজ প্রজাতি, কিছু জলজ অভিযোজন রয়েছে তবে এখনও ডাঙ্গায় চলমান প্রজাতি, ভূমিতে সীমিত স্থানান্তরযুক্ত প্রজাতি ও তিমির মতো সম্পূর্ণ জলজ গোষ্ঠী।

মডেলটিতে গবেষকরা যাদের শাখাগুলি সাধারণ বংশকে নির্দেশ করে তাদের মধ্যে প্রজাতির বিবর্তনের সম্পর্কগুলো পরীক্ষা করে দেখেছেন। প্রজাতির মধ্যে বৈশিষ্ট্যগুলোর তুলনা করে গবেষকরা এমন মডেল তৈরি করেন যা তাদের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলির বিকাশের সম্ভাবনা অনুমান করতে সাহায্য করে।

সুইজারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ ফ্রাইবুর্গের ডক্টরাল শিক্ষার্থী ব্রুনা ফারিনা লাইভ সায়েন্সকে বলেন, ‘আমাদের কাজের অন্যতম প্রধান বিষয় ছিল সম্পূর্ণ স্থলজ থেকে সম্পূর্ণ জলজ রূপে অভিযোজনের পুরো গ্রেডিয়েন্টকে অন্তর্ভুক্ত করা এবং এই অভিযোজনগুলি অপরিবর্তনীয় কিনা তা পরীক্ষা করা।’

দলটি দেখতে পেয়েছে, আংশিক জলজ এবং সম্পূর্ণ জলজ প্রজাতিদের মধ্যে একটি সীমা রয়েছে। একবার তা অতিক্রম করে গেলে জলজ অভিযোজন অপরিবর্তনীয় হয়ে যায়। জলজ পরিবেশে অভিযোজিত প্রাণীরা একাধিক পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত ছিল, যার মধ্যে একটি হচ্ছে বর্ধিত শরীরের ভর যা তাদের শীতল পরিবেশে তাপ ধরে রাখতে সহায়তা করে ও তাদের উচ্চ বিপাকের জন্য একটি মাংসাশী খাদ্যাভ্যাস। ব্রুনা লাইভ সায়েন্সকে বলেন, এই ধরনের পরিবর্তন স্থলীয় জীবের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা কঠিন করে তুলতে পারে।

ফারিনা বলেন, "আমরা দেখেছি যে (ছোট পদক্ষেপে) পুরোপুরি স্থল থেকে আংশিক জলজ হওয়া সম্ভব। তবে সম্পূর্ণ জলজ অভিযোজনের জন্য একটি অপরিবর্তনীয় সীমা রয়েছে।’

এ থেকে বলা যায়, তিমি এবং ডলফিনের মতো সম্পূর্ণ জলজ প্রাণীর ভূমিতে ফিরে আসার সম্ভাবনা কার্যত শূণ্য।

ইউনিভার্সিটি অফ লিমেরিকের কমপারেটিভ জিনোমিক্সের গবেষক ভিরাগ শর্মা লাইভ সায়েন্সকে বলেন, যদিও ডোলোজ ল এই ধরণের ম্যাক্রোবিবর্তনের গবেষণায় নিয়মিত ব্যবহার করা হয় তবে গবেষকরা এই মিথটি বাতিল করতে সক্ষম হয়েছেন যে সমুদ্র থেকে ডাঙ্গায় স্থানান্তর পুরোপুরি অসম্ভব নয়।

তিনি আরও যোগ করেন, গবেষণাপত্রটি কেবল স্তন্যপায়ী প্রাণীর উপর দৃষ্টি দিয়ে তৈরি করা। ভবিষ্যতের অনুসন্ধানগুলি অন্যান্য টেট্রাপড বংশের ক্ষেত্রেও একই অপরিবর্তনীয়তা রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে পারে।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন