প্যাক্সটনের অভিশংসন কি অনিবার্য?

টিবিএন ডেস্ক

মে ২৯ ২০২৩, ২২:৩৪

কেন প্যাক্সটন। ছবি: সংগৃহীত

কেন প্যাক্সটন। ছবি: সংগৃহীত

  • 0

অ্যামেরিকার সবচেয়ে বড় রেড স্টেইটে নিজ দলের তিন বারের অ্যাটর্নি জেনারেল কেন প্যাক্সটনের অভিশংসন ঘিরে রিপাবলিকানদের বিভক্তি অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে। প্রথম ধাপে স্টেইট হাউযে তার অভিশংসনের পক্ষে ভোট পড়লেও পরের ধাপে স্টেইটে সেনেটে তাকে চূড়ান্ত অপসারণের সিদ্ধান্ত হবে কিনা- তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।

স্টেইট সেনেটের বিচারে পার পেয়ে যাবেন বলে নিশ্চিত প্যাক্সটন। তিনি বলেছেন, সেনেটের বিচারের প্রতি তার ‘পূর্ণ আস্থা’ রয়েছে। এর অন্যতম কারণ হলো, সেনেট জুরিবোর্ডের এক সদস্য হলেন তার স্ত্রী অ্যাঞ্জেলা প্যাক্সটন। অন্য সদস্যরাও তার বেশ ঘনিষ্ঠ।

এছাড়া রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠের সেনেটের বিচার তার পক্ষে আনতে এরইমধ্যে তৎপর হয়ে উঠেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও স্টেইটের কট্টর ডানপন্থি তৃণমূল সংগঠনগুলো। 

ঘুষ নেয়া, দুর্নীতি ও অনিয়মের একাধিক অভিযোগে টেক্সাসের অ্যাটর্নি জেনারেল প্যাক্সটনকে অভিশংসনের পক্ষে স্টেইট হাউযে শনিবার ১২১-২৩ ভোট দিয়েছেন আইনপ্রণেতারা। এখন তিনি কার্যালয় থেকে বরখাস্ত আছেন। অভিযোগের তথ্য-প্রমাণ এখন যাবে স্টেইট সেনেটে। সেখানে জুরিবোর্ড প্যাক্সটনকে বহিষ্কারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে।

সেনেটে বিচার কবে হবে তা রোববার পর্যন্ত জানা যায়নি। এদিন সেনেট অধিবেশন শেষে প্যাক্সটনের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি চেম্বারের প্রিযাইডিং অফিসার রিপাবলিকান লেফটেন্যান্ট গভর্নর ড্যান প্যাট্রিক।

প্যাক্সটনের চূড়ান্ত অপসারণের জন্য সেনেটের দুই-তৃতীয়াংশ ভোট প্রয়োজন। রিপাবলিকান এই স্টেইটে নিজ দলের হাই প্রোফাইল এই সদস্যকে বহিষ্কারের পক্ষে সেনেট রায় দেবে কিনা- সেটি এখন দেখার বিষয়। এ নিয়ে দেখা দিয়েছে মতভেদও।

প্যাক্সটনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্তকারী দলের সদস্য রিপাবলিকান স্টেইট রেপ্রেজেন্টেটিভ ডেভিড স্পিলার বলেন, ‘কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন, টেক্সাসের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা তো অবশ্যই নন।’

সেনেট রিপাবলিকানদের একটি গ্রুপ রোববার বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য কনস্টিটুয়েন্টদের আমরা উৎসাহিত করছি ও স্বাগত জানাচ্ছি।’ 

তবে নিজেদের জুরিবোর্ডের সদস্য বিবেচনা করে গ্রুপটি এ সংক্রান্ত আলোচনায় যোগ দেবে না বলে জানিয়েছে।

এর আগে শনিবার অভিশংসনের ভোটাভুটির আগে ও পরে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও সেনেটের টেড ক্রুজ প্যাক্সটনের পক্ষে কথা বলেছেন।

নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরুর আগে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘ফ্রি কেন প্যাক্সটন।’ 

তিনি সতর্ক করে বলেন, প্যাক্সটনকে হাউয রিপাবলিকানরা অভিশংসিত করলে তিনি এর বিপক্ষে লড়বেন।

আর সেনেটর টেড ক্রুজ বলেছেন, অভিশংসন প্রক্রিয়াটি একেবারেই অযৌক্তিক, অ্যাটর্নি জেনারেলের আইনি বিষয় আদালতের হাতেই ছেড়ে দেয়া উচিত।

প্যাক্সটনের অভিশংসন নিয়ে একেবারেই নীরব টেক্সাসের রিপাবলিকান গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট। সেনেটের চূড়ান্ত রায় না আসা পর্যন্ত তিনি হতে পারেন অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি না চাইলে সাময়িক এই দায়িত্ব পাবেন কার্যালয়ের দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

এ বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্ত সোমবার পর্যন্ত জানাননি অ্যাবট।

প্যাক্সটন বরাবরই অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। তার বিরুদ্ধে দেয়া সাক্ষ্য মিথ্যা ও পক্ষপাতদুষ্ট।

তিনি শনিবারের ভোটের পর বলেন, ‘টেক্সাস হাউযে আজকের কুৎসিত দৃশ্য এটাই নিশ্চিত করেছে যে আমার বিরুদ্ধে আপত্তিকর অভিশংসনের ষড়যন্ত্র কখনই ন্যায়সঙ্গত নয়। শুরু থেকেই এটি একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত জালিয়াতি।’

টেক্সাসের রাইস ইউনিভার্সিটির পলিটিক্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক মার্ক পি. জোনস জানান, অভিশংসনের প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু হওয়ার কারণে প্যাক্সটন নিজের পক্ষে সমর্থন জোগাড় করতে পারেননি। হাউয রিপাবলিকানরাও নিজেদের ক্ষোভ ঝাড়তে একজোট হতে পেরেছেন।

জোনস বলেন, ‘রিপাবলিকানদের কাছে গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে জানতে চাইলে দেখা যাবে, বেশিরভাগই মনে করেন- প্যাক্সটনে তারা বিব্রত। তবে তারা আসলে প্রকাশ্যে বিরোধিতা করতে ভয় পেতেন।’

এদিকে, সেনেটে প্যাক্সটনের অভিযোগের পক্ষে শক্ত তথ্য-প্রমাণ জমা দিতে আরও নথিপত্র সংগ্রহ করছে হাউযের তদন্তদল। তারা প্যাক্সটনের সহযোগী, ব্যবসা, ব্যাংক ও ট্রাস্টের নথি তলব করেছে।

আগেও একবার অভিশংসনের মুখে পড়েছিলেন প্যাক্সটন। স্টেইট ইনভেস্টমেন্ট জালিয়াতি অভিযোগে ২০১৫ সালে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। নানা কারণে এর বিচারপ্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি।


0 মন্তব্য

Do you like cookies? 🍪 We use cookies to ensure you get the best experience on our website. Learn more...