গ্যাগ অর্ডার আরোপ ট্রাম্পের প্রকৃত অবস্থারই প্রকাশ

টিবিএন ডেস্ক

এপ্রিল ২৪ ২০২৪, ২০:৫২

২০২৩ সালের অক্টোবরে নিউ ইয়র্কে একটি অর্থ জালিয়াতি মামলার শুনানিতে আদালতে ডনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

২০২৩ সালের অক্টোবরে নিউ ইয়র্কে একটি অর্থ জালিয়াতি মামলার শুনানিতে আদালতে ডনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

  • 0

প্রসিকিউটর ক্রিস কনরয় মঙ্গলবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের হাশ মানি ট্রায়ালে ট্রাম্প সম্পর্কে একটি আলোচিত মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘তিনি জানেন তার কোন কোন কাজে নিষেধাজ্ঞা আছে, তারপরও তিনি সেগুলো করেন।’

সাক্ষী, আদালতের স্টাফ ও জুরিদের রক্ষা করার জন্য ট্রাম্পের ওপর আরোপিত গ্যাগ অর্ডারকে ট্রাম্পের অবমাননা করার বিষয়টির প্রতিই ইঙ্গিত করেছেন কনরয়। তবে ব্যবসা ও রাজনীতির ক্ষেত্রে ট্রাম্পের নেয়া পদক্ষেপসমূহ কিংবা ক্ষমতায় আসার জন্য ভোটারদেরকে ট্রাম্পের দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলোকে বর্ণনার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত কোন ব্যক্তির দেয়া ব্যখ্যাই তেমন উপযুক্ত বলে মনে হয়নি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে ট্রাম্প আরোপিত গ্যাগ অর্ডার লঙ্ঘন করেছেন কিনা- এই বিষয়ে শুনানি চলাকালীন নিউ ইয়র্কের আইনজীবী কনরয় ট্রাম্প সম্পর্কে এমন মন্তব্য করলেন। ট্রাম্প তার ওইসব পোস্টে মামলার অন্যতম প্রধান দুই সাক্ষী মাইকেল কোহেন ও স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে উদ্দেশ্য করে মন্তব্য করা ছাড়াও দাবি করেছেন যে জুরিতে পক্ষপাতদুষ্ট উদারপন্থিরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।

মঙ্গলবার শুনানির আগে ধারণকৃত এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘কোহেন একজন দোষী সাব্যস্ত মিথ্যাবাদী এবং তার কোন বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।’

হাশ মানি মামলার শুনানি চলছে ছয় দিন ধরে। এখনও আইনের নিয়মকে ট্রাম্প তোয়াক্কা করছেন না এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে তাকে কীভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে সেই বিষয়টিকেই তিনি তুলে ধরার চেষ্টা করছেন।

ট্রাম্প নতুন করে আরও নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে পারেন

প্রসিকিউটররা ট্রাম্পকে তার গ্যাগ অর্ডার লঙ্ঘন করা ১০ টি অভিযোগের প্রত্যেকটির জন্য ১ হাজার ডলার করে জরিমানা করার জন্য জাজ হুয়ান মারকানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ট্রাম্প এমনটা চালিয়ে গেলে তাকে কারাদণ্ডেও দণ্ডিত করা হতে পারে বলে ট্রাম্পের প্রতি সতর্কতা জারির দাবিও জানিয়েছেন তারা।

সিএনএন মঙ্গলবার তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আদালত অবমাননার জন্য ট্রাম্পকে কারাদণ্ড দেয়া হলে পরবর্তীতে কী পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করেছেন সিক্রেট সার্ভিস, আদালত ও নিউ ইয়র্ক সিটি ডিপার্টমেন্ট অফ কারেকশনস এর কর্মকর্তারা।

এই বিষয়ে সাবেক জাজ ও বর্তমানে কুলি ল স্কুল এর অধ্যাপক জেফরি সোয়ার্টজ সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘জাজ মারকানকে তার আদালত কক্ষের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। তিনি গ্যাগ অর্ডারের অধীনে থাকা কোন ব্যক্তিকেই – আপনি কী ভাবছেন তা আমার বিবেচনার বিষয় নয়, আমার যা ইচ্ছা আমি তাই করব- এই ধরণের কথা বলার সুযোগ দিতে পারেন না।’

ট্রাম্প আদালত ও জাজদের আদেশ অবমাননা করে যেসব কর্মকাণ্ড করছেন তা অন্য কোন অপরাধী করার পরও শাস্তি না পাওয়ার বিষয়টি একেবারেই অকল্পনীয়।

ট্রাম্প দাবি করছেন যে, গ্যাগ অর্ডার আরোপের মাধ্যমে তার বাক স্বাধীনতার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে এবং দলীয় প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে তার প্রচারণা কার্যক্রমে বাধা দেয়া হচ্ছে।

ট্রাম্প গ্যাগ অর্ডারের নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন- মঙ্গলবার ট্রাম্পের আইনজীবীদের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে নিজের হতাশা প্রকাশ করেন মারকান। এক পর্যায়ে মারকান ট্রাম্পের আইনজীবীদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন যে, তারা আদালতে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছেন।

ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে

অধিকাংশ জাজদের মত ট্রাম্পের এমন কর্মকাণ্ডে জাজ মারকানের অভ্যস্ত না হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে অন্যান্য অনেক জাজ, সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীদের মতোই মারকানও অ্যামেরিকান আইন ও সংবিধানের কথা উল্লেখ করে ট্রাম্পকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করছেন না। ট্রাম্পের ওপর আরোপ করা গ্যাগ অর্ডার নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্ক গুরুতর মনে না হলেও এর মাধ্যমে অ্যামেরিকানদের জীবনযাপনের ওপর ট্রাম্পের প্রভাব সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চলমান চারটি ফৌজদারি মামলা, অন্যান্য আইনি জটিলতা ও একবার অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। অন্য সব অ্যামেরিকানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এমন সব আইনের প্রতি তিনি বরাবরই অবমাননামূলক আচরণ দেখিয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে সংঘটিত কর্মকাণ্ডের জন্য সাবেক প্রেসিডেন্টদেরকে বিচারের আওতায় আনা উচিত নয়- ট্রাম্পের এমন দাবির প্রেক্ষিতে চলতি সপ্তাহেই একটি মামলার শুনানিতে তিনি আবারও আইনের প্রতি তার সহজাত আচরণ বজায় রাখবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে চলমান নির্বাচনে হস্তক্ষেপের ফেডারেল অভিযোগ অস্বীকার করেই এমন দাবি করেন ট্রাম্প।

সাবেক এই প্রেসিডেন্ট রোববার তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে বলেন, ‘প্রেসিডেনশিয়াল ইমিউনিটি ছাড়া একজন প্রেসিডেন্ট সঠিকভাবে কাজ করতে বা সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।’

ট্রাম্প প্রেসিডেনশিয়াল ইমিউনিটির কথা উল্লেখ করে এমন সুবিধা চাইছেন যা একজন প্রেসিডেন্টে এর কার্যালয়কে আইনি জবাবদিহিতা থেকে অব্যাহতি দেবে। সাংবিধানিক নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক মনে হওয়া এই সুবিধা গত আড়াই শতাব্দীতে অন্য কোন প্রেসিডেন্ট ভোগ করেননি।

ট্রাম্প হয়তো ভাবছেন তিনি আইনের ঊর্ধ্বে

তিনি আইনের ঊর্ধ্বে- এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের বিরুদ্ধে হওয়া সবগুলো মামলার ক্ষেত্রেই ট্রাম্পের এমন মনোভাব প্রতিফলিত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আসা সবগুলো অভিযোগই তিনি অস্বীকার করেছেন।

ইতিহাসে তিনিই প্রথম অ্যামেরিকান প্রেসিডেন্ট যিনি তার নির্বাচনে পরাজয়ের জন্য ব্যাপক আকারে হওয়া জালিয়াতিকে দায়ী করেছেন। ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেন নির্বাচিত হওয়ার পর নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তনের চেষ্টা করেন তিনি।

গ্যাগ অর্ডার উপেক্ষা করা ও আদালত অবমাননার মতোই একই মনোভাবের মাধ্যমে উৎসাহিত হয়েই ট্রাম্প মার-এ-লাগো এস্টেটের ক্ষেত্রে ভুলে ভরা নথি আদালতের কাছে উপস্থাপন করেছেন। ট্রাম্প দাবি করেছিলেন যে, সম্পদগুলো তার, তার দেশের নয়। এই মামলার শুনানিও শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন