অ্যালাস্কার হিমবাহ বাঁধে ধস চোখ রাঙাচ্ছে বিশ্বকে
টিবিএন ডেস্ক
আগস্ট ৯ ২০২৩, ১৩:২৮
- 0
অ্যালাস্কা স্টেইটে ধূসর সাদা রঙের দোতলা একটি বাড়ি নিচের নদীতে ধসে পড়ে এবং এর ছাদের একটি অংশের উপর দিয়ে পানি বইতে থাকে। এর পাশেই তীরের প্রান্তে একটি কন্ডো বিল্ডিং ছিল, ভাঙনের কারণে যার ভিত্তি ইতোমধ্যে ধসে পড়েছে।
এ সপ্তাহের শেষের দিকে অ্যালাস্কার রাজধানীতে হিমবাহ বাঁধ গলে গিয়ে ফেটে মেন্ডেনহল নদীর পানির স্তর ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে।
এ ধরনের তুষার ও বরফের বাঁধে ফটল ধরাকে জোকুহলুপ বলা হয়। অ্যামেরিকায় এটি তুলনামূলকভাবে কম পরিচিত হলেও গবেষকরা বলছেন, এ ধরনের হিমবাহের বন্যা বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৫ মিলিয়ন মানুষকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
আমান্ডা আরার বাড়ি সোমবার নদীর তীরে অনিশ্চিতভাবে ঝুলছিল। জুনাউ এম্পায়ারকে তিনি বলেন, ‘আমরা সেখানে বসেছিলাম। কেবল দেখছিলাম, হঠাৎ করে একের পর এক গাছগুলো ভেঙে পড়ছে। আমি ক্রমশ উদ্বিগ্ন হতে শুরু করি।’
জুনাউয়ের বন্যাটি চমকপ্রদ মেন্ডেনহল হিমবাহের পাশের অববাহিকা থেকে ধেয়ে এসেছিল। এটি বসন্ত এবং গ্রীষ্মের সময় অববাহিকায় জমে থাকা বৃষ্টি এবং গলে যাওয়া তুষারপাত ঠেকাতে বাঁধ হিসাবে কাজ করে। বাঁধ ভেঙে হঠাৎ করেই পানি হিমবাহের নিচ থেকে মেন্ডেনহল হ্রদে প্রবাহিত হওয়া শুরু করে এবং সেখান থেকে এটি মেন্ডেনহল নদীর নিচে প্রবাহিত হয়েছিল।
অববাহিকা থেকে নেমে আসা পানি ২০১১ সাল থেকে নিয়মিত বন্যার সৃষ্টি করেছে। ইউনিভার্সিটি অফ অ্যালাস্কা সাউথইস্টের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ইরান হুড বলেন, সাধারণত পানি ধীরে ধীরে কয়েকদিন ধরে নেমে যায়।
এবার শনিবারের ঘটনাটি বিস্ময়কর ছিল, কারণ পানি এত দ্রুত প্রবাহিত হয়েছিল যা নদীর প্রবাহকে আগের রেকর্ডের চেয়ে প্রায় দেড়গুণ বেশি। এতে গবেষকদের হিমবাহ বিস্ফোরণের ঘটনা অধ্যয়নের জন্য স্থাপন করা সেন্সরগুলো ভেসে গিয়েছিলো।
হুড বলেন, ‘নদীর ক্ষমতার বাইরে পানি প্রবাহিত হওয়ায় স্রোত এত বেশি ছিল।’
জুনাউয়ের ডেপুটি সিটি ম্যানেজার রবার্ট বার সোমবার বলেন, ‘দুটি বাড়ি পুরোপুরি এবং তৃতীয়টি আংশিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। পানিতে পড়ে যাওয়া ভবনসহ আটটি ভবনের ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে।’
নদীপাড়ের মেরামতের মাধ্যমে কিছু ভবন রক্ষা করা সম্ভব হতে পারে বলে জানান তিনি। অন্যদের ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মেন্ডেনহল ও বিশ্বের অন্যান্য হিমবাহ গলে যাচ্ছে, কিন্তু এ ধরনের বন্যার সঙ্গে এর সম্পর্ক জটিল।
যে অববাহিকায় বৃষ্টি এবং গলে যাওয়া পানি সংগ্রহ করা হয় তা আগে সুইসাইড হিমবাহ দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। এটি মেন্ডেনহল হিমবাহের মধ্যে প্রবাহিত হতো কিন্তু জলবায়ু উষ্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুইসাইড হিমবাহটি পিছিয়ে গেছে। ফলে অববাহিকার একটি হ্রদ মেন্ডেনহল বাঁধে জমে থাকে।
হুড বলেন, মেন্ডেনহল নদীর তীরবর্তী জমিটি মূলত আলগা হিমবাহের জমা গ্লেসিয়ার দিয়ে গঠিত বলে এটি ভাঙনের জন্য বিশেষভাবে সংবেদনশীল। তিনি বলেন, ভারী বৃষ্টিপাতের সঙ্গে বন্যা হলে ক্ষয়ক্ষতি আরও ভয়াবহ হতে পারত।
হুড আরও বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে, আলাদা কোনো বন্যা নয়।’
কানাডার ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালগারির পরিবেশগত ভূকম্পনবিদ সেলেস্তে লাবেদজ বলেন, ‘এ ধরনের বন্যার সময় ও আয়তনের পরিবর্তনশীলতার কারণে বন্যার জন্য প্রস্তুতি নেয়া কঠিন হয়ে পড়ে।’
চলতি বছর নেচার কমিউনিকেশনসে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, হিমবাহ বিস্ফোরণে বন্যার ঝুঁকিতে থাকা অর্ধেকেরও বেশি মানুষ মাত্র চারটি দেশের বাসিন্দা। দেশগুলো হলো ভারত, পাকিস্তান, পেরু ও চায়না।
পেরুতে ১৯৪১ সালে এ ধরনের ভয়াবহ বন্যায় ৬০০০ মানুষ মারা গিয়েছিলেন। ক্যানাডার বৃটিশ কলম্বিয়ায় ২০২০ সালে হিমবাহ হ্রদের বিস্ফোরণের ফলে প্রায় ১০০ মিটার (৩৩০ ফুট) উচ্চতার পানির স্রোত দেখা দেয়, তবে তাতে কেউ আহত হননি।
ক্রিস এবং বব উইন্টার ১৮৮১ সালে মেন্ডেনহল নদী থেকে প্রায় ১৫.২ মিটার (৫০ ফুট) দূরে তাদের বাড়ি তৈরি করেছিলেন। এটি ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো বন্যায় প্লাবিত হয়েছিল, এ ঘটনা তাদের বাড়িটি ০.৯ মিটার (তিন ফুট) উঁচু করতে বাধ্য করেছিল। শনিবার এটি প্রায় ৭.৬ সেন্টিমিটার (তিন ইঞ্চি) পানির দিয়ে আবার প্লাবিত হয়েছিল, যা কার্পেট, সাবফ্লোরিং এবং ড্রাইওয়াল ভিজিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।
ক্রিস উইন্টার বলেন, ‘আপনাকে সব কিছু ত্যগ করতে হবে। আমি জানি না কী ঘটতে যাচ্ছে, কিন্তু আমরা এই মুহূর্তে আমাদের বাড়িতে থাকতে পারছি না।’
তিনি জানান, তার সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হলো, তাদের দুজনেরই বয়স ৭০-এর মাঝামাঝি। সম্ভবত কোনো এক সময় তাদের দক্ষিণ দিকে সরে যেতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের পরিবারের সদস্যদের বড় করেছি এবং তারা চলে গেছে। বর্তমানে জুনাউতে কেউ নেই এবং আমি জানি না যে আমরা এটি বিক্রি করতে সক্ষম হব কিনা।’