গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা অচলাবস্থায় পৌঁছালেও শেষ হয়নি

টিবিএন ডেস্ক

মার্চ ২৭ ২০২৪, ১৯:৩৬

গাজায় চলমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ শহর। ছবি: সংগৃহীত

গাজায় চলমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ শহর। ছবি: সংগৃহীত

  • 0

ইযরায়েল ও হামাসের মধ্যে গাজায় জিম্মি চুক্তি এবং যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা আরেকটি অচলাবস্থায় পৌঁছালেও তা শেষ হয়নি বলে জানিয়েছেন আলোচনার সঙ্গে সম্পর্কিত তিনজন কূটনীতিক।

একজন কূটনীতিক আলোচনাটিকে ‘আটকে আছে তবে আলোচনা চলমান’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, ‘পর্দার আড়ালে প্রস্তাব অব্যাহত রয়েছে।’

দ্বিতীয় একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, পক্ষগুলো এখনও যোগাযোগ করছে তবে আলোচনা ‘বিরতিতে’ রয়েছে।

সিআইএ পরিচালক বিল বার্নস গত সপ্তাহের শেষের দিকে দোহায় ইযরায়েল, ইজিপ্ট ও কাতারের সঙ্গে বৈঠক করার পরও কোন অগ্রগতি হয়নি।

এক ইযরায়েলি কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছে, বার্নসের প্রস্তাব ইযরায়েল গ্রহণ করে এবং পরে তা হামাসের কাছে পাঠানো হয়।

তবে মঙ্গলবার সকালে ইযরায়েলকে জানানো হয় যে হামাস প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এরপর বার্নস এবং ইযরায়েলের মোসাদ প্রধান ডেভিড বার্নিয়া কাতার ত্যাগ করার পর দোহায় থাকা আলোচক দলকে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইযরায়েল।

হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাসেম নাঈম সোমবার সিএনএনকে বলেন, ‘আলোচনা শুধু বন্দি বিনিময় চুক্তিকে ঘিরেই সীমাবদ্ধ নয়। পূর্ণ যুদ্ধবিরতি, গাজা থেকে সব বাহিনী প্রত্যাহার এবং সব বাস্তুচ্যুত মানুষকে তাদের বাড়িঘরে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে হামাসের কোন অনুরোধে ইযরায়েল রাজি হয়নি।’

সবশেষ আলোচনায় ইযরায়েল গাজায় আটক ৪০ জন ইযরায়েলি জিম্মির বিনিময়ে প্রায় ৭০০ প্যালেস্টেনিয়ান বন্দিকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে। যাদের মধ্যে অনেকে ইযরায়েলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করেছে। যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে বন্দি মুক্তি দেয়া হবে। বিরতি প্রায় ছয় সপ্তাহ স্থায়ী হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে অন্যান্য প্রধান আলোচনার বিষয়গুলো হচ্ছে, দক্ষিণে আশ্রয় নেয়া গাজাবাসীদের উত্তরে ফিরে যাওয়ার ক্ষমতা, গাজার জন্য মানবিক সাহায্য নিশ্চিত করা এবং ইযরায়েলি সেনাদের বর্তমান অবস্থান।

হামাস যুদ্ধের অবসান এবং গাজা থেকে আইডিএফ সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনার দাবি জানিয়েছে। ইযরায়েল উভয় বিষয়ে সম্মত হতে অস্বীকার জানিয়েছে। একই সঙ্গে হামাসকে ধ্বংস করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে জোর দিয়েছে।

ইযরায়েলি কর্মকর্তা বলেন, প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার প্যালেস্টেনিয়ানকে উত্তরে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হবে এমন প্রস্তাবের বিরোধিতা করেনি হামাস। পরিবর্তে সমস্ত বাস্তুচ্যুত গাজাবাসীকে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া উচিত বলে মনে করে হামাস। একই সঙ্গে হামাস মনে করে যে, আইডিএফ সেনাদের গাজা ছেড়ে যাওয়া উচিৎ।

অ্যামেরিকান কর্মকর্তারা চলতি সপ্তাহে বলেছেন, দোহায় আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে।

একজন অ্যামেরিকান কর্মকর্তা যুক্তি দিয়েছেন, প্রক্রিয়াটি জটিল এবং ধীর কারণ হামাস আলোচকদের গাজায় গোষ্ঠীর প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া পাওয়া দরকার, যিনি বিশাল ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ ব্যবস্থার কোথাও অবস্থান করছেন বলে ধারণা করা হয়।

যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তে ব্যর্থতা গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় বড় আকারের স্থল আক্রমণ চালানোর ইযরায়েলের পরিকল্পনাকে ত্বরান্বিত করতে পারে। সেখানে আশ্রয় নেয়া ১৪ লাখ প্যালেস্টেনিয়ানদের নিরাপত্তার জন্য সুসংগত পরিকল্পনা ছাড়া অভিযানের বিরুদ্ধে অ্যামেরিকা বারবার ইযরায়েলকে সতর্ক করে আসছে।

অ্যামেরিকান ও ইযরায়েলি কর্মকর্তারা সিএনএনকে বলেছেন, দক্ষিণ গাজার রাফায় অভিযান চালিয়ে ইযরায়েল কীভাবে এগিয়ে যাবে সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন অ্যামেরিকান কর্মকর্তা এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গালান্ট কোন চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেননি।

গালান্টকে বলা হয়েছিল যে রাফাহকে বড় আক্রমণের জন্য ইযরায়েলকে একটি ‘বিকল্প’ খুঁজে বের করতে হবে।

ইযরায়েলি কর্মকর্তারা বলেছেন যে, গালান্ট রাফায় হামাসের ওপর হামলা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে অ্যামেরিকান সুপারিশের জন্য উন্মুক্ত ছিলেন, তবে শেষ পর্যন্ত ইযরায়েলি কর্মকর্তারা বলেছেন যে তারা এই অঞ্চলে বাকি পাঁচটি হামাস ব্যাটালিয়নকে নির্মূল করার জন্য প্রয়োজনীয় যা করা লাগবে তাই কার্যকর করবেন।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন